বিএনপি নেতা নাছিরের দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৪৪:৩৩ অপরাহ্ন

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর ভাই বিএনপি নেতা মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সদরের বাসায় নাছির চৌধুরীর সামনেই এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে দিরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন নাছির চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন আক্তার। সেই সঙ্গে মামলার জন্য একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। ঘটনার পর থেকে বিচার চেয়ে থানা-পুলিশ ও দিরাইয়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন নাছির চৌধুরীর দুই সন্তান। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে চৌধুরীর পরিবারের ভয়ে প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলছেন না। এগিয়ে আসছেন না সমাজপতিরাও।
অভিযোগে পারভিন আক্তার উল্লেখ করেছেন, ১৮ এপ্রিল রাত ১টার দিকে খাবার টেবিলে বসা অবস্থায় দিরাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুক চৌধুরী ও তাঁর ভাই মিলন চৌধুরী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় প্রতিবাদ করলে প্রথমে কিল–ঘুষি পরে লাঠি, রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। এতে রক্তাক্ত আহত হন পারভিন আক্তার ও তাঁর মেয়ে নাজিয়া চৌধুরী (২০) ও নাদিয়া চৌধুরী (১৯)।
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাছির চৌধুরী অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তিনি ভাইদের সঙ্গে দিরাইয়ের আনোয়ারপুরস্থ বাসায় থাকেন। নাছির চৌধুরীকে দেখতে দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে দিরাইয়ের বাসায় যান পারভিন আক্তার। এর পরই এ ঘটনা ঘটে। এ–সংক্রান্ত কয়েক অডিও রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিবেদকের হাতে।
এতে শোনা যায়, পারভিন আক্তারকে তালাকপ্রাপ্ত দাবি করে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেন বলেন মাসুক চৌধুরী। প্রতিউত্তরে পারভিন দাবি করেন, তাঁর ডিভোর্স হয়নি। তিনি নাছির চৌধুরীর দুই সন্তানের মা। সন্তানেরা তাঁর বাবার কাছে এসেছে। নাছির চৌধুরীর কাছে তাঁরা আসবেনই বলেন তিনি। এ সময় পারিভনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা গায়ে হাত তুলবেন না।’ তখন মাসুক চৌধুরী বলেন, ‘প্রয়োজনে তা–ই করব।’ একপর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর এবং কান্নার শব্দ শোনা যায়। নাছির চৌধুরীর দুই মেয়েকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘বাবা ওরা মারতেছে। রক্ত বের করে ফেলছে। আমরা আর তোমার কাছে আসব না। জীবনেও আসব না। তোমার সামনে আমাদের মেরেছে।’
এ সময় নাছির চৌধুরী বলেন, ‘আমি দেখেছি। আমি দেখেছি।’ তখন নাছির চৌধুরীর ছোট মেয়ে নাদিয়া চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি থাকো তোমার ভাইদের সঙ্গে। আমরা আর আসব না।’ একসময়ের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক এমপি নাছির চৌধুরী এ সময় বলেন, ‘আমার ওপর রাগ করে লাভ নেই মা। নাজিয়াকে ডাকো। যেতে দিও না।’
নাদিয়া চৌধুরী তখনো কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘তোমার সামনে আমাদের মারছে।’ জবাবে নাছির চৌধুরী বলেন, ‘আমি হাঁটতে পারি না। চলাফেরা করতে পারি না। তোমরা যেও না।’ তখন নাদিয়া চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা আমাকে খুন করবে। মেরে ফেলবে। হাত ছাড়ো বাবা। যেতে দাও।’ তখনো চিৎকার শোনা যাচ্ছিল নাছির চৌধুরীর দুই সৎভাই মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরীর।
এ বিষয়ে নাছির চৌধুরীর সৎভাই দিরাই উপজেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুক চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মিলন চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। বড় ভাইয়ের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে জানতাম। ওই মহিলা আসা-যাওয়া করেন। সম্পর্ক না জেনে মহিলা ও তাঁর মেয়েদের মেনে নিব কী করে? কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। এসব মিথ্যা কথা। এরা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল, এ জন্য রেকর্ড করে ছেড়ে দিয়েছে। মারধর করে থাকলে প্রমাণ করুক। নইলে আমরাও মানহানির বিচার চাই।’
অডিও রেকর্ড ও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাবেক এমপি-বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নাছির উদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন আক্তার আজ শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘থানায় অভিযোগ দিয়ে এসেছি। এখনো পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। আমাদের যখন মারধর করে বের করে দেয়, তখন একটা রিকশাওয়ালা ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেনি। একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়ে রাতে জীবন রক্ষা করেছি। পরে একজন আমাদের উদ্ধার করে তাঁর বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন, এখনো আমরা সেখানেই (দিরাই) আছি।’
পারভিন বলেন, ‘ছোট মেয়ের কানে ঘুষি মারায় ভেতরে রক্ত জমে গেছে। বড় মেয়ের কপালে ঘুষি মারায় চোখের নিচে রক্ত জমে আছে। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিল-ঘুষি ও রডের আঘাত রয়েছে। আমিও মারাত্মক জখম। ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করাবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলেছি এবং উনি (নাছির চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন আক্তার) এসে জিডিও করে গেছেন। আমরা আদালতের অনুমোদনের জন্যও পাঠিয়ে দিয়েছি ইতিমধ্যেই। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালে নিঃসন্তান নাছির চৌধুরী ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্ত্রী পারভিন আক্তারের গর্ভে জন্ম হয় দুই কন্যাসন্তান নাজিয়া ও নাদিয়ার। কয়েক বছর আগে নাছির চৌধুরীর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন নাছির চৌধুরী। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে তাঁকে দেখতে দিরাইয়ে ছুটে যান স্ত্রী পারভিন আক্তার ও এই দম্পতির দুই সন্তান নাজিয়া ও নাদিয়া। কিন্তু কোনোভাবেই নাছির চৌধুরীর স্ত্রী–সন্তানদের ওই বাসায় থাকতে দিতে চান না নাছির চৌধুরীর সৎভাইয়েরা।