সোনাই নদীতে বাঁধ দিয়ে ওপেন চাঁদাবাজি
বাঁধ পরিদর্শনে এসে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সাথে মিটিং করে চলে গেল পুলিশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ২:১৪:৫৯ অপরাহ্ন

আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : সোনাই নদীতে বাঁধ দিয়ে ওপেন চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশের পর বাঁধ এলাকা পরিদর্শনে এসে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সাথেই মিটিং করেছে ছাতক থানা পুলিশ। গতকাল রোববার বেলা ২টায় ছনবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজের দোকানের দোতলায় বসে ওই সিন্ডিকেটের সাথে মিটিং করে এসআই আব্দুর রহিমের নেতৃত্বাধীন পরিদর্শন টিম।
মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বাঁধ নির্মাণের সাথে জড়িত ইসলামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার শফিক মিয়া, অভিযুক্ত মখলিসের বড় ভাই আব্দুল কুদ্দুস, ছনবাড়ী গ্রামের বিরাই মিয়া, ব্যবসায়ী ইলিয়াসের প্রতিনিধি বনগাঁও গ্রামের রুস্তম আলী ও মখলিসের প্রতিনিধি হিসেবে বাঁধ থেকে চাঁদার টাকা উত্তোলনকারী নিজগাও গ্রামের আব্দুল্লাহর ছেলে ইকবাল। এ সময় মখলিসের বড় ভাই ‘বিএনপি নেতা’ দাবীদার আব্দুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষুদঘার করে নানা অশালীন বক্তব্য দিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
এর আগে বেলা দেড়টায় শফিক মেম্বারকে নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলে বাঁধ এলাকা পরিদর্শনে যায় পুলিশ। কিন্তু বাঁধে না নেমেই নদীর পারে দুই মিনিট দাঁড়িয়ে শফিক মেম্বারকে নিয়ে আবার ছনবাড়ি বাজারে মিটিংয়ে চলে আসে।
এ ব্যাপারে ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার শফিক মিয়া জানান, ছাতক থানা থেকে পুলিশের একটি টিম আজ বাঁধ পরিদর্শনে এসেছিলেন। পুলিশের একজন কর্মকর্তা ফোন দিয়ে যেতে বলায় আমি সেখানে যাই। পরে ছনবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজের দোকানের দোতলায় বসে কথাবার্তা হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সেক্রেটারি মখলিসুর রহমানের বড় ভাই আব্দুল কুদ্দুসসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের এই টিমকে তারা বাঁধ সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত করেছেন।
শফিক মেম্বার দাবি করেন, ছাতক থেকে কোম্পানীগঞ্জে পাথর পরিবহন সহজ করার জন্য আমদানিকারকরা সোনাই নদীতে বাঁধটি নির্মাণ করেছেন। এখানে কোনো চাঁদাবাজি হচ্ছে না। পাথর পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে বাঁধের মেরামতের প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগেই মখলিসকে প্রতি ট্রিপে তিনশো টাকা করে দিচ্ছেন।
গাংপার নোয়াকোট গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আছদ্দর আলী বলেন, বাঁধ পরিদর্শনে এসে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সাথে মিটিং করে চলে গেছে পুলিশ। এখানে স্থানীয় কোনো মানুষের বক্তব্য নেওয়া হয়নি। এমনকি জনসাধারণের কাউকে পুলিশের কাছেই ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে ছাতক থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশের আমরা পুলিশের একটি টিমকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, প্রবাহমান নদীতে বাধ দেওয়া বেআইনি হলেও বাঁধটি কেটে দেওয়ার এখতিয়ার পুলিশের নেই। এ কাজ এসিল্যান্ডের এখতিয়ারে। এসিল্যান্ড যদি পুলিশের সহায়তা চান, সে ক্ষেত্রে আমরা সয়ায়তা দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে আপনি দুই উপজেলার (কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক) এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ‘কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক সীমান্তবর্তী সোনাই নদীতে বাঁধ দিয়ে ওপেন চাঁদাবাজি’ শিরোনামে গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) দৈনিক সিলেটের ডাকে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।