৪ দিনের হামলা-পাল্টা হামলায় ইরানে ২২৪ ও ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০২৫, ৩:৪১:২৯ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক : গত চার দিন ধরে হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত থাকলেও সবশেষে গতকাল সোমবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ভবনে হামলা করে ইসরায়েল। এর কিছুসময় পর থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করে ইরান। আল জাজিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এক সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর দেশটির উত্তরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলার সাইরেন সতর্কতা সক্রিয় করা হয়েছে।
এ সময় ইসরায়েলের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কাজ করছে।
ইসরাইলের তেল আবিব শহরের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তেল আবিবের নাগরিকদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়তে হবে। আল-জাজিরার ও দ্য টাইম অব ইসরায়েল এ খবর নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি বড় এলাকার বাসিন্দাদের ‘অবিলম্বে সরে যেতে’ সতর্ক করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এর পরপরই ইরানের বিপ্লবী গার্ড তেল আবিবের বাসিন্দাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, গত চার দিনের হামলা ও পাল্টা হামলায় ইরানে ২২৪ জন এবং ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের কেরমানশাহ শহরের ফারাবি হাসপাতালে ‘সরাসরি’ হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে সশস্ত্র সংঘাতকালে হাসপাতালের ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের “গুরুতর লঙ্ঘন” এবং “যুদ্ধাপরাধ” বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই।
ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলেও নতুন করে হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির তাসনিম নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ইরাক সীমান্তের কাছে ইলম প্রদেশের মুসিয়ান পৌরসভার দমকল বাহিনীর একটি ভবনে “নৃশংসভাবে” হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
হামলার সময় ইসরায়েলি কিছু ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইরানি কর্মকর্তারা। এ ছাড়া, প্লানেট ল্যাবস প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে তাবরিজ বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র রানওয়ের মাঝ বরাবর আঘাত হেনেছে, যা রানওয়েটিকে সাময়িকভাবে অচল করে দেয়।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলায় তেহরানে কুদস ফোর্সের একটি কমান্ড সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আরও হামলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করেছে, তেহরানের ওপর আকাশ নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন জানিয়েছেন, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কয়েকদিন ধরে চালানো হামলার পর তেহরানের আকাশে ইসরায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইসরায়েল ইরানের ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে। গত চারদিনে ইরানের ১২০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি করে আইডিএফ।
ডেফ্রিন বলেন, “শুধু গত রাতেই ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ইরানের ২০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে, যেগুলো ইসরায়েলের দিকে ছোড়ার আগেই ধ্বংস করা হয়।”
তিনি আরও জানান, ইসরায়েল মধ্য ইরানের ইস্পাহান শহরে প্রায় ১০০টি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এ অভিযানে প্রায় ৫০টি জঙ্গিবিমান অংশ নেয় এবং ক্ষেপণাস্ত্র গুদাম, লঞ্চার ও কমান্ড সেন্টারগুলোতে আঘাত হানে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, তেহরানের কিছু অংশের বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়তে হবে, কারণ শাসকগোষ্ঠী ও নিরাপত্তা স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর আকাশ নিয়ন্ত্রণের দাবির পর, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা এখন বিজয়ের পথে। তেহরানের আকাশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলে, আমরা সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কাজ চালিয়ে যাব, সফল হব এবং আপনারাও বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবেন।”
ইসরায়েল রাজধানীর ৩ নম্বর এলাকায় অবস্থিত “সামরিক অবকাঠামো” লক্ষ্য করে নতুন করে হামলা চালাবে বলে জানায়। এলাকাবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আগাম সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তেহরানের সাধারণ মানুষের ক্ষতিসাধনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। যদিও এর আগে তিনি বলেছিলেন, ইরানের হামলার জন্য “মূল্য দিতে হবে” তেহরানের জনগণকে।
অন্যদিকে, ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। রোববার রাতে তেল আভিভ, হাইফা ও আরও কয়েকটি শহরে ইরানি হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে এবং প্রায় ৩০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন বলেন, “আমরা ইরানের ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছি।”
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে “অন্যায় হামলা” মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “শত্রুরা হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ইরানকে দমন করতে পারবে না। শত শত বীর প্রতিবার পতাকা বহন করবে এবং পথচলা অব্যাহত রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র চায় না, তবে শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার তার রয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল কখনও এনপিটি চুক্তিতে সই করেনি, তবে ধারণা করা হয়, তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ইরানি মুখপাত্র বাঘাঈ বলেন, “এই অঞ্চলে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের একমাত্র ধারক হচ্ছে দখলদার ইহুদি শাসকগোষ্ঠী।”