ছাতক-সিলেট রেলপথ চার বছর ধরে বন্ধ, সংস্কার কাজে ধীরগতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:০৪:২৪ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে সিলেটের রেলপথ। দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা খুব শিগগিরই আবারো ছুটবে ট্রেন, বাজবে হুইসেল। তবে কাজের ধীরগতি নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার দাবি এলকাবাসীর। বৃষ্টিপাতের কারণে কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে এমনই প্রত্যাশা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও রেল কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, ২০২১ সালের দিকে করোনা মহামারির সময় থেকে বন্ধ ছাতক-সিলেট রেললাইন। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০২২ সালের সর্বগ্রাসী ভয়াবহ বন্যায়। বন্যার প্রবল স্রোতে রেলপথের একাধিক স্থানের সড়ক ও স্লিপারলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকেই থেমে যায় ছাতক-সিলেট রুটের রেল চলাচল। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে স্টেশন, ট্র্যাক, আর ট্রেনের হুইসেল হারিয়ে যায় মানুষের জীবন থেকে। এতে বিঘ্নিত হয় ঢাকার সাথে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন ছাতক শিল্প এলাকার ব্যবসায়ীরা।
দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর রেললাইন পুনঃস্থাপনে ফের সংস্কার কাজ শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ২৩০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। যেখানে রেল লাইন সংস্কার, স্টেশনের আধুনিকায়নসহ রাখা হয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা।
এদিকে, রেল লাইন সংস্কার কাজের শুরু থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ঢিমেতালে করা হচ্ছে কাজ। কাজের ধীর গতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, রেল লাইন কাজ শুরু হওয়ার পর আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু কাজ যেভাবে হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। এভাবে কাজ হলে কয়েক বছর সময় লাগবে।
সিলেট বিভাগের শিল্পাঞ্চল ছাতক, যেখানে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন আর পণ্য পরিবহনের জন্য। বালু, পাথর, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রী বহন হতো এই রুটে। রেল চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যও।
স্থানীয় বাসিন্দা আক্তার হোসেন বলেন, ছাতক রেলপথ ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বন্যায় রেলপথ বিধ্বস্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। দীর্ঘদিন ধরে রেলপথ বন্ধ থাকার পর কাজ শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আনন্দিত। আশা করি দ্রুত সময়ে কাজ শেষ হবে।
বৃহৎ বাজেটের রেলপথ সংস্কার কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড। আগামী ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে সংস্কার কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ চলছে ঢিমেতালে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী বলেন, কাজের গতি ঠিক আছে। বৃষ্টির কারণে কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিলো। তবে বৃষ্টিপাত কমলে দ্রুতগতিতে কাজ চলবে। নির্ধারিত সময়ের আগেও কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে, ছাতক বাজার-সুনামগঞ্জ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক রয়েছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ে এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, রেললাইন পুনঃস্থাপনের কাজে জেলাবাসী আশান্বিত হয়েছেন। আমরা চাইবো সংস্কার কাজটি গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। কেননা রেললাইনের কাজ বার বার হয় না। বিষয়টি আমরা তদারকির মধ্যে রাখবো।
চার বছর পর ফের রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। আশা, রেল লাইনে দ্রুত বাজবে ট্রেনের হুইসেল, ফিরবে পুরনো চেহারা।