বাড়ছে জনদুর্ভোগ-যানজট
সিলেটের পাড়ামহল্লায় রেষ্টুরেন্টের হিড়িক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ৫:২১:০১ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী :
সিলেট নগরীর পাড়া-মহল্লায় রেষ্টুরেন্ট তৈরির হিড়িক পড়েছে। যথাযথ পরিকল্পনা আর নিজস্ব পার্কিং ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক রেষ্টুরেন্ট। এতে করে বাড়ছে যানজট। বেড়েছে জনদুর্ভোগও।
জানা গেছে, বিভাগীয় শহর সিলেট নগরীতে একসময় হাতে গোনা কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট ছিল। গ্রাহকও ছিলেন তুলনামূলক কম। সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে রেষ্টুরেন্টের সংখ্যা। নগরীতে বেড়েছে দোকানপাট, বিপনীবিতানও। সিলেটে পর্যটক আগমনের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খাবার দোকান বা রেষ্টুরেন্টে।
গেল কয়েক বছরে নগরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি মেগা রেষ্টুরেন্ট। কেবল জিন্দাবাজার নয়, নগরীর বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, শাহী ঈদগাহ, সোবহানীঘাট এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে রেষ্টুরেন্ট। এসব এলাকাসহ নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রেষ্টুরেন্ট তৈরি করে দিনরাত সমানতালে ভোজনবিলাস চলছে। সিলেট নগরকে এখন রেষ্টুরেন্টের নগরও বলছেন কেউ কেউ। এসব এলাকায় আধুনিক কিংবা সাধারণ বিপনী বিতান, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে। রেষ্টুরেন্ট তৈরির হিড়িক পড়লেও নিজস্ব পার্কিং হাতেগোনা দু’একটা ছাড়া আর কারও নিজস্ব পার্কিং নেই।
রেষ্টুরেন্টের মধ্যে ভোজনরসিকদের সবসময় ভিড় লেগে থাকায় এসব এলাকায় যানজটও হয়ে গেছে নিত্য দিনের সঙ্গী। পাড়া-মহল্লার মধ্যে রেষ্টুরেন্ট তৈরির ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়ও এর প্রভাব পড়েছে। পাড়া- মহল্লার প্রবেশ মুখে যানজট লেগেই থাকে। এতে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও ব্যাঘাত ঘটছে। যানজটে পড়ে সাধারণ লোকজনকেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এসব রেষ্টুরেন্টের নিজস্ব পার্কিং না থাকায় মূলত জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
পাড়ামহল্লার লোকজনের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যানজটের ফলে পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে রসময় হাইস্কুল ও এইডেড স্কুলে শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-র সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা বলেন, সিলেট নগরীতে সাম্প্রতিককালে রেষ্টুরেন্টের সংখ্যা বেড়েছে। রেষ্টুরেন্ট চালু করতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিয়েই চালু করতে হয়। মেগা রেষ্টুরেন্টের ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্রেরও দরকার হয়। কিন্তু এসবের যদি কেউ তোয়াক্কা না করেন; তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়টির প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার বিষয়টিও ভাবতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, হোটেল রেষ্টুরেন্টের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বিধান রয়েছে। রেষ্টুরেন্ট যেখানে লোকসমাগম বেশি হয় স্বাভাবিকভাবেই সেখানে পরিবেশ বজায় রাখা দরকার। জনসাধারণের জন্য হুমকি হয় এমন ব্যবসা পরিচালনা করার ব্যাপারে বিধি নিষেধ আছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যক্রম চালাবে বলে জানান তিনি।
সিলেট রেষ্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান সিদ্দিকী মুক্তা সিলেটের ডাককে বলেন, রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এটা সত্য। কিন্তু খাবারের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা তার দিকে কড়া নজরদারি থাকতে হবে। খাবারের গুণগত মানের ক্ষেত্রে শতভাগ আপোষহীন থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সাথে সাথে স্বাস্থ্যের বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। রেষ্টুরেন্টের চালুর আগে দরকার নিজস্ব পার্কিং। যদি কোনো রেষ্টুরেন্টের নিজস্ব পার্কিং না থাকে; তাহলে এর প্রভাব নগরবাসীর মধ্যে পড়ে। ব্যবসা করবেন আবার মানুষকে ভোগান্তি দেবেন-এটাতো হতে পারে না।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সের জন্য যে বিধি রয়েছে; তা অবশ্যই মানতে হবে। যদি কেউ জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন তাহলে অবশ্যই সিটি কর্পোরেশন এটি দেখবে। নিজস্ব পার্কিং না থাকলে যানজট তৈরি হবে। কোথাও এ রকম হলে সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।



