সিলেট বিভাগের আরো ৪টি আসন
আরিফ, নাসির চৌধুরী, রেজা কিবরিয়া ও নুরুল ইসলামকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১:১১:১৭ অপরাহ্ন
নূর আহমদ :
নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে সিলেট বিভাগের আরো ৪টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এর মাধ্যমে সিলেটের আলোচিত আসন সিলেট-৪, সুনামগঞ্জের দুটি সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা), সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) ও হবিগঞ্জের ১টিতে প্রার্থী চূড়ান্ত হলো। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের মধ্যে বিএনপি কেবল ফাঁকা রেখেছে সিলেট-৫ আসনটি। ধারণা করা হচ্ছে, এই আসনটি শরীক দলের জন্য ছেড়ে দেয়া হতে পারে। তবে শেষ সময়ে যে ৪ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাদের তিনজনই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী। যার মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী, নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও রেজা কিবরিয়া বেশ আলোচিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এই আসনগুলোতে।
বিএনপি’র গুলশান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের ৪টিসহ ৩৬ আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে। বাকী ২৭ আসন সমমনা দলের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রের দাবী এই মনোনয়নগুলো নির্বাচনী এলাকার রাজনৈতিক ভারসাম্য ও ভোটের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেওয়া হয়েছে। সিলেট বিভাগের চারটি আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট- কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর) আসনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকা আরিফুল হক চৌধুরীকে নির্বাচনী ক্ষেত্রে দলের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে এতো দিন বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না দিলেও আরিফুল হক চৌধুরী নিজেকে দলীয় প্রার্থী দাবি করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিশেষ করে সিলেট-৪ আসন খালি থাকায় নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছিল। ওই সময়ে আরিফুল হক দ্রুত ঢাকায় গিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। পরে সিলেটে ফিরে তিনি নিজ উদ্যোগে সিলেট-৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাতে থাকেন। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের গ্রামাঞ্চলে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি।
অন্যদিকে, এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে মনোনয়ন প্রত্যাশী গোয়াইনঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাকিম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীসহ আরও কয়েকজন সক্রিয়ভাবে মনোনয়ন চাইছিলেন। তাদের কর্মী সমর্থকেরা আরিফুল হকের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে প্রচারণাও চালান। এসব বিরোধিতা ও সমালোচনার মধ্যে নিজের প্রচার কার্যক্রমে অবিচল ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি জানিয়ে আসছিলেন, মাঠের মানুষ ও তৃণমূল নেতাদের সাড়া তাকে আরও অনুপ্রাণিত করছে।
শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বিকেলে আসে ঘোষণা। দলের মহাসচিব সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণা করলে তাকে ঘিরে থাকা অনিশ্চয়তা কেটে যায়। মনোনয়ন পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকরা স্বস্তি প্রকাশ করেন এবং অনেকে আনন্দ মিছিলেও যোগ দেন।
এই আসনে আরিফুল হক চৌধুরীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হবেন দুই বারের জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মো: জয়নাল আবেদীন। এই আসনে জমিয়ত, খেলাফত ও এনসিপির প্রার্থীও রয়েছেন।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়ার ছেলে। নির্বাচনী অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁর মনোনয়নের খবরে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করলেও ‘খুশি’ হতে পারেননি অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
হবিগঞ্জের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে আগে তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ফাঁকা রাখা হয়েছিল হবিগঞ্জ-১ আসনটি। এখানে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী ও রেজা কিবরিয়া।
রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে তিনি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক, গণ অধিকার পরিষদ ও আমজনতার দলের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন।
রেজা কিবরিয়া সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি খুশি। এলাকার মানুষও খুশি এই মনোনয়ন নিয়ে। এখন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় বা জনগণ আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আমি আমার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নেব। আমি আশাবাদী মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে পারব।’
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক নাসির উদ্দিন চৌধুরী । দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নাসির উদ্দিন চৌধুরী দুইবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং একবার এমপি ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৮৫ ও ১৯৮৯ সালে দুইবার দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ৫০৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে প্রথম ও ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নাসির উদ্দিন চৌধুরী। প্রথম দুইবার অর্থাৎ ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কাছে পরাজিত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি ও জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা অ্যাড. তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
এদিকে, মনোনয়ন ঘোষণার পরপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন একই আসনের জামায়াতের প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির। এই আসনে শক্ত প্রার্থী শিশির মনির। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অভিনন্দন নাসির উদ্দিন চৌধুরী। সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সুনামগঞ্জ-০২ (দিরাই-শাল্লা)।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম। স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং দলের কৌশল অনুযায়ী তিনি এই আসনের দায়িত্ব পেয়েছেন। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, সুনামগঞ্জ সদর আসনে তাকে প্রার্থী করার মধ্যদিয়ে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের লালিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তিনি এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং দলের কাণ্ডারি তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ সময় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন।
এদিকে, সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনটিতে প্রার্থী এখনো ঘোষণা করেনি বিএনপি। জোট হলে আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা উবায়দুল্লা ফারুককে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসনটিতে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালেও তিনি বিএনপি জোট থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে এখানে বিএনপি নেতা চাকসু মামুন দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন থেকে এলাকাবাসীর সঙ্গে কাজ করছেন। বিএনপির এই নেতা মনে করেন তাকে মানোনয়ন দিলে জয় হবে ধানের শীষের।


