লাখো মানুষের ভালোবাসায় শহীদ ওসমান হাদির শেষ বিদায়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১২:৪৩ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর জাতীয় কবির সমাধি পাশে শায়িত হলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদি। স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে শেষবিদায় জানাল অসংখ্য মানুষ। আজ শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হয় ওসমান হাদির জানাজা। তাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ লাখো মানুষ অংশ নেন।
জুলাই আন্দোলনের মুখ ওসমান হাদি (৩২) গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগরে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিন দিন পর নেওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে।
কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রয়াস ব্যর্থ করে গত ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদির জীবনাবসান ঘটে। কফিনবন্দী হয়ে গতকাল শুক্রবার দেশে ফেরেন জুলাই আন্দোলনের এই সৈনিক। তাঁর মরদেহ রাখা হয় শেরেবাংলা নগরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে।
সেখান থেকে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছিল পাশের সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ হৃদরোগ ইনস্টিউটে ফিরিয়ে এনে গোসল করানো হয়। এরপর বেলা ২টার আগে ওসমান হাদির মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়।
ওসমান হাদির জন্য শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। শোকের আবহের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের মিছিল সকাল থেকে ছুটতে থাকে সংসদ ভবন পানে। সেই মিছিলে উচ্চারিত হচ্ছিল ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান।
জানাজার সময় ২টায় দেওয়া হলেও তাঁর আগেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সংসদ ভবনের দক্ষিণাংশের দুটো মাঠ ও আশপাশের এলাকা ছিল লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। জানাজায় অংশ নিতে আসা মানুষ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঢোকেন। তবে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় সবাই সে সযুগোগ পাননি। গোটা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে কাতারবদ্ধ হয়ে জানাজায় অংশ নেন লাখো মানুষ।
জানাজা শুরুর আগে দেওয়া বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বীর ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি এখানে। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছ এবং চিরদিন বাংলাদেশ যত দিন আছে, তুমি সকল বাংলাদেশির বুকের মধ্যে থাকবে। এটা কেউ সরাতে পারবে না।’
ওসমান হাদির জানাজা পড়ান তাঁর বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। জানাজা শুরুর আগে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ভাই হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার প্রত্যাশা প্রকাশ করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের জানাজার আগে বক্তব্য দেন। হাদি হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনে কোনো ধরনের সহিংসতা না চালাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান জাবের। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জানাজায় অংশ নেন জামায়াতের আমির মো. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মো. গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জানাজা শেষে ওসমান হাদির কফিন নিয়ে মিছিল রওনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে। বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ এলাকায় পৌঁছায় কফিন। জাতীয় কবির সমাধির পাশে ওসমান হাদির কবরের বন্দোবস্ত আগেই করে রাখা হয়েছিল। সব প্রক্রিয়া শেষে এক ঘণ্টার মধ্যেই সেই কবরে শায়িত করা হয় ওসমান হাদিকে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে আক্রান্ত হন তিনি। গুলিবর্ষণকারী হিসেবে পুলিশ যাকে চিহ্নিত করেছে, সেই ফয়সাল করিম মাসুদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা। হাদি হত্যামামলায় পুলিশ ১৪ জনকে আটক করলেও ফয়সাল করিম এখনো ধরা পড়েনি।



