শীতের অতিথিরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ৭:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন
শত্রু বানানোর জন্য ঝগড়া করতে হবে না, তুমি ভালো কাজ করো এমনি তোমার শত্রু হয়ে যাবে। -নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।
অতিথিরা কি আসবে এবার? এমন প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।কারণ প্রতি বছরই তাদের আগমন কমছে। তাই আসন্ন শীতে অতিথিরা সেভাবে আসবে না বলেই আশংকা করা হচ্ছে। এই অতিথিরা হচ্ছে পাখি, পরিযায়ি পাখি। প্রতি বছর মধ্য অক্টোবর থেকেই বিশ্বের শীত প্রধান দেশগুলো থেকে নানা প্রজাতির বিপুল সংখ্যক পাখি এদেশে আসতে শুরু করে। কিন্তু দিন দিন এর সংখ্যা কমছে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দশক আগেও এদেশে ২০০ থেকে ২১৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসতো। এ সংখ্যা প্রতি বছরই হ্রাস পাচ্ছে।
এই সুন্দর পৃথিবীতে পাখি হচ্ছে আল্লাহর অপূর্ব একটি সৃষ্টি। পাখি সুন্দরের প্রতিক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনন্য। আর পাখির গানে ঘুম ভাঙ্গা এবং পাখির গানে ঘুমিয়ে পড়ার একটা কথা প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি অনেকটা জুড়েই রয়েছে নানা বর্ণ-নানা জাতের পাখির উপস্থিতি। শীত এলেই রং-বেরঙের নাম না জানা অনেক রকম পাখিতে ভরে যায় আমাদের জলাশয়, হাওড়, বিল ও পুকুর। ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাতসহ প্রকৃতির প্রতিকূলতা থেকে বাঁচতে তারা পাড়ি জমায় হাজার হাজার মাইল দূরে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে বাংলাদেশে। বিজ্ঞানিদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় দশ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে বিশাল অংশই পরিযায়ি পাখি। এই পাখিরা নিজের দেশে বছরের মাত্র কিছু সময় অবস্থান করে। বাকি সময়টা তারা অন্য দেশে কাটায়। এর কারণ হচ্ছে-নিজ দেশের ভৌগোলিক অবস্থা, আবহাওয়া তথা পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পারা। বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরিগমন চলতে থাকে সারা বছরই। যেমন-উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল। বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান উত্তর গোলার্ধে হলেও এর বেশির ভাগ অঞ্চলে শীতকালে তুষারপাত হয় না। তাই ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, সাইবেরিয়া ও চিন থেকে বিপুল প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পশ্চিমের আরব, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জ থেকেও ঋতু পরিবর্তনের নানা সময়ে পাখিরা এখানে আসে। জানা গেছে, সুদূর অতীত থেকে বাংলার সমতল ও সুন্দরবনকে লক্ষ করে প্রায় আটটি পথে আসে এই পাখিরা। এরা সাধারণত ৬০০ থেকে ১৩০০ মিটার উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। ছোট পাখিদের ঘণ্টায় গতি ৩০ কিলোমিটার। দিনে-রাতে এরা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উড়তে পারে। বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার অনায়াসে ওড়ে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব পাখি তাদের গন্তব্যস্থান ঠিকভাবেই নির্ণয় করে। আবার তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে ঠিকই তাদের বাড়ি চিনে নেয়।
এদেশে অতিথি পাখিদের আগমন কমে আসছে। ব্যাপকহারে পাখি শিকার ও জলাভূমির সংখ্যা কমে যাওয়াই এর অন্যতম কারণ। তাই পাখি নিধন বা পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে পাখি শিকার বন্ধে রয়েছে আইন। সেটা খুব একটা কার্যকর নেই। এজন্য পাখিরা দিনে দিনে বাংলাদেশকে তাদের জন্য ‘অনিরাপদ’ বলেই মনে করছে। দেশি-বিদেশি সব ধরনের পাখি নিধন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা-না হলে কেবল অতিথি নয়, একদিন দেশিয় নানা বর্ণের পাখিগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।