বড়লেখায় ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে আটকে নির্যাতন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩:২৭ অপরাহ্ন
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : বড়লেখায় ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, রশি দিয়ে বেঁধে টেনে স্থানীয় বাজারে নিয়ে ওই নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি জোরপূর্বক তাকে ছেলেধরা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টাও চালানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকায় অমানবিক এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করেছে। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, এক নারীকে স্থানীয় লোকজন হাত বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। পানিধার বাজারে তাকে লোকজন ঘিরে ধরেছে। তার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। লোকজন তাকে একের পর এক প্রশ্ন করছেন। কেউ তাকে গালি দিচ্ছেন। চড় মারছেন। লাথি-গুঁতাও দিচ্ছেন। মারধরের ভয়ে ওই নারী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। জোর করে তাকে ছেলেধরা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টাও করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর নাম তাহেরা বেগম (৩৫)। তার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের মেয়ে।
তাহেরার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাহেরা বেগম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কয়েক বছর আগে তার বিয়ে হলেও মানসিক সমস্যার কারণে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়িতেই থাকেন। তবে তাহেরা প্রায়ই স্বজনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। পরে স্বজনরা তাকে খোঁজে এনে বাড়িতে রাখেন। গত ৯ নভেম্বর স্বজনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাহেরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। স্বজনরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি বড়লেখায় চলে আসেন। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকায় একটি বাড়িতে গেলে ওই বাড়ির লোকজন তাকে ছেলেধরা সন্দেহে আটকে রাখে। পরে স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে জড়ো হয়ে সেখান থেকে তার হাত বেঁধে টেনে টেনে তাকে পানিধার বাজারে নিয়ে যান। বাজারে নিয়ে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। অনেকে এই ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাহেরাকে উদ্ধার করে।
বড়লেখা থানার ওসি মো. আবদুল কাইয়ূম গতকাল বুধবার জানান, তাহেরা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে ছেলেধরা সন্দেহে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করেন। শুনেছি তাকে কিছুটা মারধর করা হয়েছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তাকে মারধর করা ঠিক হয়নি। রাতে তাহেরার স্বজনরা থানায় এসে আমাদের কাছ থেকে তাকে নিয়ে গেছেন বলেও জানান ওসি।