সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে আইজিপি
‘পুলিশকে রাজনৈতিক কুপ্রভাবমুক্ত রাখতে চাই’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘পুলিশ এখনো মন ভাঙা অবস্থায় আছে’-এই মন্তব্য করে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, গত ১৫ বছর দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে পুলিশকে জনবিরোধী কাজে লাগানো হয়েছে। পুলিশ এতো নির্মম হতে পারে-এটা ধারণা করতে পারি না। এ অবস্থায় পুলিশের কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনাই সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশে যেন আর রাজনৈতিক কুপ্রভাবে না পড়ে-সেজন্য পুলিশ রিফর্মে হাত দেয়া হয়েছে। তিনি পুলিশ সদস্যদের মানুষের কাছে যাওয়া এবং তাদের আস্থা অর্জনের পরামর্শ দেন। সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যাকান্ডের জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে বিভাগের সকল ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব মন্তব্য করেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলায় নিরীহ লোকজনকে আসামী করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মামলার ক্ষেত্রে অসাধু ব্যক্তিরা সুবিধা নিয়েছেন। নিরীহ যাদের আসামী করা হয়েছে-তাদের গ্রেফতার করা হবে না-এই আশ^াস দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয় পাবেন না, নিশ্চিত থাকুন আমরা আপনাদের গ্রেফতার করবো না। ’ নিরীহ লোকদের কেউ গ্রেফতার করলে তিনি তা তার নজরে আনার পরামর্শ দেন। তিনি চাঁদাবাজদের চাঁদা না দিতেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
আইজিপি বাহারুল আলম আরো বলেন, এফিডেভিট দিয়ে মামলা থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। একমাত্র পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কেউ যদি বলে বাদীকে দিয়ে এফিডেভিট দিয়ে আসামীকে দায়মুক্ত করে দেবে-এটা সঠিক নয়। এভিডেভিটের আইনগত কোন ভিত্তি নেই। এটায় মামলার লাভ-ক্ষতি কিছুই হয় না। যতই এফেডেভিট দেয়; পুলিশি তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তে প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিবেই। আমি নির্দেশ দিয়েছি, মামলার তদন্ত চলাকালে যখনই ধরা পড়বে আসামী নিরীহ-তাকে যেন পুলিশ ফোন দিয়ে আশ্বস্ত করে-তাকে গ্রেফতার করা হবে না।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, সারা দেশে লুট হওয়া ছয় হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। দেড় হাজার অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র উদ্ধারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিলেটে সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলা প্রসঙ্গে আইজিপির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালেই এ সাংবাদিক মারা গেছেন। তাকে গুলি করে মারা বড় অপরাধ। এজন্য ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তিনি তুরাব হত্যা মামলার বিষয়ে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন। আইজিপি পুলিশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাংবাদিকসহ সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় র্যাবের মহাপরিচালক শহিদুর রহমান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মুশফেকুর রহমানসহ সিলেটের চার জেলার পুলিশ সুপারসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের মধ্যে সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি খালেদ আহমদ, সাংবাদিক এম এ হান্নান, মাহবুবুর রহমান রিপন, সজল ছত্রী, ইয়াহিয়া মারুফ প্রশ্ন করেন।