সিলেট শহরের বেওয়ারিশ কুকুর সমস্যার মানবিক সমাধান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২:৫০:৩৬ অপরাহ্ন
সুয়েব আদমজী, লন্ডন : সিলেট- আমাদের প্রাণের শহর, আমাদের শৈশব, এই শহর আমাদের গর্ব, আমাদের ভালোবাসা। কিন্তু দুঃখজনক যে, এই শহরটি আজ দীর্ঘদিনের একটি জটিল সমস্যার মুখোমুখি।আর সেটি হলো শহরে বেওয়ারিশ কুকুর ও তার ক্রমবর্ধমান সংখ্যা।
প্রতিদিন রাস্তায়, বাজারে, স্কুলের সামনে কিংবা রাতের অন্ধকারে এই কুকুরগুলো শুধু ভয়ের কারণ নয়, বরং জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কুকুরের কামড়ে মানুষ আহত হচ্ছে। স্কুলগামী বাচ্চারা ভয় পেয়ে রাস্তায় হাঁটতে চায় না। কুকুরগুলো খাবারের অভাবে রাস্তায় ছড়ানো-ছিটানো আবর্জনা খুঁজে বেড়ায়। এতে শহরের পরিচ্ছন্নতাও ব্যাহত হয়।
এই সমস্যা কেবল নাগরিক জীবনকে বিঘ্নিত করছে না, বরং জননিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমাদের এখনই একসাথে সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আমাদের প্রিয় সিলেট আবারও হয়ে ওঠে একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও মানবিক বাসযোগ্য শহর হিসেবে ।এ লক্ষে আমরা একটি পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে পারি,যা আপনাদের কাছে পেশ করতে চাই ।
পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো :
“বেওয়ারিশ কুকুরদের সুরক্ষিত আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শহরকে নিরাপদ রাখা।”
পরিকল্পনাটি মোটামুটি নিম্নরুপ :
আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন:শহরের বাইরে বা উপকণ্ঠে একটি নির্দিষ্ট শেড/অভয়ারণ্য তৈরি করা। সেখানে থাকবে পানি, খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা।
খাদ্য সরবরাহ:
সিলেট শহরের হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো থেকে উচ্চিষ্ট খাবার সংগ্রহ করা। তা প্রতিদিন কুকুরগুলোর মধ্যে বিতরণ।
চিকিৎসা ও টিকা :
পশু চিকিৎসকদের সহযোগিতায় নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ। রেবিস টিকা প্রদান।
জন্মনিয়ন্ত্রণ :
কুকুরদের জন্মনিরোধক ইঞ্জেকশন বা অস্ত্রোপচার (Neutering) এর মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।
সচেতনতা সৃষ্টি :
মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে বোঝানো যে বেওয়ারিশ কুকুরকে তাড়ানো বা নির্যাতন নয়,বরং তাদের মানবিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে:- শহরে কুকুরের সংখ্যা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসবে; মানুষ ও কুকুর উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে; শহরের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা উন্নত হবে; সিলেট হবে একটি প্রাণিবান্ধব ও নিরাপদ শহর; শিশুদের স্কুলে যাতায়াত নিরাপদ হবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা- আমরা আমাদের সমাজে একটি মানবিক উদাহরণ স্থাপন করতে পারবো। এই পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন শুধুমাত্র আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সকলের সমষ্টিগত প্রচেষ্টা।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন সিটি করপোরেশন থেকে প্রয়োজনীয় জমি ও লজিস্টিক সহায়তা এবং সেই সাথে সিলেটের হোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিদিনের উচ্চিষ্ট খাবার সরবরাহের নিশ্চয়তা আর নাগরিক সমাজের সচেতনতা ও উদ্যোগ।
আমরা বিশ্বাস করি, একসাথে পরিশেষে বলতে চাই- মানুষ ও প্রাণীর সুশৃঙ্খল সহাবস্থানই একটি সভ্য সমাজের পরিচায়ক। আসুন আমরা সবাই মিলে এই উদ্যোগটিকে বাস্তবে রূপ দিই যাতে সিলেট শহর সত্যিই হয় নিরাপদ, ও সুন্দর। এ ব্যাপারে পরামর্শ ও সহযোগিতা চাই।




