জাফলংয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী হত্যাকান্ড
তিন আসামী গ্রেফতার, পুলিশের দাবি ধর্ষণের পর হত্যা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ৭:০৭:১৫ অপরাহ্ন
গোয়াইনঘাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। তারা হচ্ছে-উপজেলার মুজিবনগর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে জব্বার মিয়া, একই গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া ও বুধিগাঁও হাওর গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে সেবুল মিয়া। তাদের মধ্য থেকে আসামী বাচ্চু মিয়া ধর্ষণ এবং হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অপর দুইজনও পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গোয়াইনঘাট থানায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ জানান, আসামী বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতো এবং মাঝে মধ্যে ভারতীয় খাসিয়াদের বাগান থেকে সুপারি চুরি করতো। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় ছিচকে চুরিরও অভিযোগ রয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে জব্বারের ঘরে বসে তারা তিনজন এক সঙ্গে ইয়াবা সেবন করে। এক পর্যায়ে এই তিন জন মিলে কেক, বিস্কুট এবং কোমল পানীয় এর লোভ দেখিয়ে তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজার থেকে অজ্ঞাতনামা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে স্থানীয় একটি টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা তিনজনে মিলে সংঘবদ্ধভাবে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী বাধা দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং লাঠি ও পাথর দিয়ে ওই নারীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরদিন সকালে স্থানীয়রা মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতনামা ওই নারীর বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পরে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শেখ মো. সেলিম, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ এবং গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে. এম. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে সিআইডি ও পিবিআই এর ফরেনসিক টিম অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় সনাক্তের জন্য মরদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ঘটনার আলামত সংগ্রহ করেন।
এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহিরুল ইসলাম খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে ১২ ডিসেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এমরুল কবির এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত এবং আটক করেন। এদের মধ্যে জব্বার মিয়াকে ১৫ ডিসেম্বর, বাচ্চু মিয়াকে ১৮ ডিসেম্বর আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং সেবুল মিয়াকে ১৯ ডিসেম্বর রাতে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি পাথর খন্ড ও অজ্ঞাত মহিলার পরিহিত কাপড় চোপড় এবং ব্যবহৃত কম্বলের পোড়া অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে. এম. নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেটের পুলিশ সুপারের সঠিক দিকনির্দেশনায় ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লুলেস এই হত্যাকান্ডটির রহস্য উদ্ঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত তিন জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর সোমবার তামাবিল স্থলবন্দর-সংলগ্ন মুজিবনগর এলাকার একটি টিলা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক নারীর বিবস্ত্র এবং রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। রাতের বেলা তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজারে কাশের পাগলার ভাঙাড়ির দোকানের সামনে এবং আশরাফের বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত ঘরে রাতযাপন করতো।