বনসম্পদে নির্ভরশীলতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:২১:৫০ অপরাহ্ন
বন সম্পদে নির্ভরশীল দেশের ৬৪ ভাগ মানুষ। সাধারণত বনের আশপাশের মানুষজন ছাড়াও অন্য এলাকার অধিবাসিরাও গ্রামিণ বন, সড়কের পাশের বৃক্ষ ও ব্যক্তিগত জমির বৃক্ষরাজি থেকে সম্পদ সংগ্রহ করেন। অবশ্য বৈশ্বিক হিসেবে সারা বিশ্বে তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ বন ও বনজ সম্পদের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। সে হিসেবে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ একটু বেশি হলেও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার হিসেবে তা অনেক কম। জাতিসংঘ বিশ্বের সব দেশকে ৩০ শতাংশ বনভূমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ এখানে বনভূমির পরিমাণ ১৪ দশমিক এক শতাংশ।
নানা কারণে এদেশে বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে-১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে চার লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর। যার মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং দুই লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি শিকার হয়েছে জবর দখলের। আর বনভূমি ধ্বংসের কারণে বন্যপ্রাণির ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।দেখা গেছে, বনভূমি ধংস করে মানুষই তার নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছে। প্রথমত বর্ধিত জনসংখ্যার চাপে বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে।এছাড়া, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বনজ সম্পদ। শিল্পায়ন ও বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য নদ-নদী, খাল-বিলসহ প্রাকৃতিক উন্মুক্ত জলাধারগুলোয় নিক্ষেপণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাধার বা জলজ জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে নষ্ট করা হচ্ছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে আবহাওয়ায়। বাতাস দূষিত হচ্ছে, ক্ষয় হচ্ছে মাটি। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে। যার ফলে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর।
বনসম্পদ সুষ্টিকর্তার অপূর্ব দান। শত শত বছর ধরে বনে আপনা থেকেই জন্মায় বৃক্ষ, পুষ্টিকর নানা শাকসবজি ও ফলমূল। আর জীবজন্তুরও অবাধ বিচরণক্ষেত্র এই বন। তাই দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে দেশের বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। আর বাংলাদেশে রয়েছে বনায়নের বিপুল সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বনায়নের জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।