জুড়ীতে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের নামে মামলা!

জুড়ী (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের জুড়ীতে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে মিছিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মিছিলের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ২৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নাশকতার এ মামলায় মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের আসামি করায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মামলার বিষয়টি জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জুড়ীতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। পরদিন শুক্রবার পুলিশ বাদী হয়ে জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মীরা জনসাধারণের যান চলাচল বন্ধ ও নাশকতামূলক কর্মকন্ড করার জন্য বেআইনিভাবে একত্রিত হয়ে রাস্তায় মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অমান্য করে তারা মিছিল শুরু করে। পরে নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে সরকারি কাজে বাধা দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলার এজাহারের ১১ নম্বর আসামি উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের রুমুজ আলীর ছেলে লোকমান হোসেন। তিনি মারা যান ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট। মারা যাওয়ার ৬ বছর পর তাকে মামলার আসামি করায় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এ মামলায় ৬ নম্বর আসামি করা হয় জায়েদ আহমদকে। তিনি ৭ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। জায়েদ আহমদ উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত ফয়জুল্লাহর ছেলে।
উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের রজব উদ্দিনের ছেলে বুরহান উদ্দিন ২ বছর ধরে আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। মামলায় বুরহানকে ২৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
ফুলতলা বাজারের ইব্রাহিম আলীর ছেলে নাঈম উদ্দিন ৮ বছর আগে প্রথমে কাতার যান। সেখান থেকে তিনি এখন পর্যন্ত পর্তুগালে অবস্থান করছেন। তাকেও পুলিশের করা ওই মামলায় ২৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মৃত ও প্রবাসীদের নামে নাশকতার মামলা করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মৃত ও প্রবাসী ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
মামলার ১১ নম্বর আসামি মৃত লোকমান হোসেনের বড় ভাই মাহতাব আহমদ জানান, আমার ভাই লোকমান ৬ বছর ২ মাস আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। প্রশাসনের কাছে আমার প্রশ্ন আমার ভাই কিভাবে মিছিলে অংশ নিল? মৃত ব্যক্তির নামে যদি মামলা হয় তাহলে আমরা যারা জীবিত আছি তাদের উপর কি ধরনের অত্যাচার চলে একবার আপনারা ভেবে দেখুন!
প্রবাসী জায়েদ আহমদের বড় ভাই আব্দুস শুকুর জানান, আমার ভাই ২০১৮ সাল থেকে প্রবাসে আছে। সে প্রবাসে থেকেও পুলিশি মামলার আসামি! এমনকি যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় তাদেরও আসামি করা হয়েছে।’
পর্তুগাল প্রবাসী নাঈম আহমদের বাবা ইব্রাহিম আলী জানান, আমার ছেলে প্রায় ৮ বছর ধরে প্রবাসে আছে। প্রবাস থেকে কিভাবে মিছিলে অংশ নিল এবং মামলার আসামি তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
মামলার আসামি মৃত লোকমান হোসেনের বিষয়ে জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মাসুম রেজা জানান, লোকমান হোসেন বিগত ৬ বছর আগে মারা যান।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে মামলার আসামি করায় এমনটা হয়েছে। তদন্ত করে সংশোধন করা হবে।