কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক
শ্রীমঙ্গলে আমন ধানের বাম্পার ফলন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২:৩২:৩২ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : শ্রীমঙ্গলে চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ জুড়ে সোনালি আমন ধান ফলেছে। ধান কেটে বাড়ির আঙিনায় আনার কাজও শুরু করেছেন অনেক কৃষক। আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই পুরো উপজেলায় ধান কাটা শেষ হবে বলে কৃষকরা জানান। ফলে দিনব্যাপী চলছে ধান কাটার কর্মযজ্ঞ। লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ধান পেয়ে অনেক কৃষক আনন্দিত। ধান কাটা-মাড়াইয়ে কৃষকের পাশাপাশি দিনমজুরদের মাঝেও বেড়েছে কর্ম ব্যস্ততা।
উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের টিকরিয়া, আশিদ্রোন, কপালী পাড়া, রামনগর এলাকা এবং শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের জেটি রোড ও ভাড়াউড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। রামনগর গ্রামের ধান কাটতে আসা শ্রমিক মন্টু কর জানান, ‘দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে ধান কাটেন। একদিনে এক ‘কেয়ার’ ধান কাটতে চারজন শ্রমিক লাগে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শ্রমিকরা ধান কাটেন বলে কৃষকরা জানান। এতে অঞ্চল অনুযায়ী প্রতি শ্রমিককে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি দিতে হয়।’
ধান মাড়াই শ্রমিক সোহেল রানা জানান, প্রতি বিঘা জমির ধান মেশিনে মাড়াই করতে স্থান ভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা করে নেয়া হয়। এরপর ধান মাড়াই শেষ হলে কৃষকদের ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব শুরু হবে। এবার আমন ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন চাষিরা। বাজারে চালের দাম চড়া থাকায় এবার লাভও বেশি হবে বলে আশা করছেন তারা। শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,
এবার শ্রীমঙ্গলে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমন চাষ হয় অর্থাৎ মোট আমন চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের বারি হাইব্রিড-৬, হীরা-১০, এজেড-৭০০৬, সুবর্ণ-৮ জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এছাড়াও উফশী জাতের বিআর-১১ ও ২২, ব্রি ধান- ৩২, ৩৪, ৪৯, ৫২, ৭১, ৭৫, ৮৭, ৯৩, ৯৪, ৯৫ এবং বিনা-৭, ১১, ১৬, ১৭ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। স্থানীয় জাতের ধানও চাষ করা হয়েছে। এর নামগুলো হলো- বিরইন, বালাম, কালিজিরা ও চিনিগুঁড়া জাতের ধান। কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান, ‘এবার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৯ হাজার ১৪২ মেট্রিক টন। যা থেকে চাল উৎপাদন হবে ৪৫ হাজার ৬৩৪ মেট্রিক টন।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন জানান, ‘এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও সময়মতো বীজ ও সার পাওয়ায় এবার শ্রীমঙ্গলে রোপা আমনের অনেক ভালো ফলন হয়েছে। এবার আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে হাওর অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেন। ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১১ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। উপজেলার ৭৫ শতাংশ কৃষকরা ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে ফসল তুলেছেন।’
আশিদ্রোন এলাকার কৃষক মো. শাকির আহম্মেদ আক্ষেপের সঙ্গে জানান জানান, ‘এবার চার একর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করেছিলাম। বাম্পার ফলনও হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে ধানে পানি জমে ধান ঝরে পড়ে যাওয়ায় কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে পারিনি।’
টিকরিয়া কপালী পাড়ার কৃষক বাবুল কপালী জানান, ‘আমরা গত বছরের চেয়ে এ বছর অনেক বেশি ধান পেয়েছি। সরকার যদি বেশি দামে ধান কিনে তাহলে আমরা আরও খুশি হবো।’