পাহাড়ি ঢলের পর নতুন রূপে সাদাপাথর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৪, ৩:১৯:২২ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : পাহাড়ি ঢলের পর নতুন রূপ পেয়েছে সাদাপাথর। প্রকৃতি যেন আপন মনে সাজিয়েছে এই পর্যটনকেন্দ্রটিকে। এবারের ঢলে নদীর আকার বেড়ে গিয়ে সুবিশাল জায়গাজুড়ে জমেছে পাথরের স্তূপ। স্বচ্ছ পানির সঙ্গে সাদাপাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরাও।
গত মঙ্গলবার সাদাপাথর গেলে কথা হয় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদনান সাইফের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই বছর আগে সহকর্মীদের নিয়ে সাদাপাথর এসে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই মুগ্ধতার টানে আবার এসেছেন। এবার পাহাড়ি ঢলে নদীর আকার বেড়ে যাওয়ায় জায়গাটার সৌন্দর্য বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সাদাপাথরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এসে উচ্ছ্বসিত চট্টগ্রামের বন বিভাগের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সিলেটে আমাদের প্রশিক্ষণ চলছে। ফাঁক পেয়ে ঘুরতে এসে বিমোহিত হয়েছি। জায়গাটি অপূর্ব সুন্দর।’ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে অবস্থিত মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাদাপাথরের সমাহার। এই পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
বন্যার কিছুটা প্রভাব পড়েছে এই পর্যটনকেন্দ্রে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বন্যার কারণে কর্তৃপক্ষের আদেশে এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল পর্যটনকেন্দ্র। গত শুক্রবার খুললেও পর্যটকদের আনাগোনা কম। রেস্তোরাঁ এবং কসমেটিকসের দোকানগুলোতে নেই কর্মব্যস্ততা। পর্যটকদের অপেক্ষায় দিন কাটছে মাঝিদের। বেকার সময় পার করছেন ফটোগ্রাফাররা।
মেঘের বাড়ি রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী মো. সফাত উল্লাহ বলেন, ‘ভোলাগঞ্জে পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেছে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। তাই রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছি।’
ফটোগ্রাফার মেহরাব হোসেন বলেন, ‘পর্যটক কমে যাওয়ায় আমরা অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সাদাপাথরে পর্যটক টানতে ‘মাস্টার প্ল্যান’ নেওয়া হয়েছে। এ প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে এই পর্যটনকেন্দ্রের চিত্র। এখানে বিনিয়োগ এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এদিকে, দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে পাথর চুরিতে সক্রিয় একটি চক্র। রাতের আঁধারে তারা সেখান থেকে পাথর চুরি করছে। এতে পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাদাপাথর চুরি হচ্ছে। এ বিষয়ে সিলেটস্থ কোম্পানীগঞ্জ সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল হক বলেন, জায়গাটি সৌন্দর্যে ভরপুর, মনোরম। পাহাড়ি ঢলের পর নতুন রূপ ধারণ করেছে। পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না হলে এর সৌন্দর্য ধরে রাখা যাবে না। তাই তিনি সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, বিজিবি এবং আরএনবির ক্যাম্পের মাঝে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র। চুরি রোধে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। গত রোববার রাতে ছয়টি নৌকাসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত আছে বলেও জানান ওসি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, প্রকৃতি সাদাপাথরকে নতুন রূপ দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পর নদীর আকার বেড়েছে। প্রচুর পাথর এসে জমা হয়েছে। সাদাপাথরের নতুন রূপে আকৃষ্ট হয়ে প্রচুর পর্যটক আসার সম্ভাবনা আছে। তিনি নান্দনিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই স্পটটিকে রক্ষায় স্থানীয় সচেতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।