সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
ভার্থখলা মসজিদের মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৪, ১:০০:৪১ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : নগরীর ভার্থখলা জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও মসজিদের অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠেছে। তিনি কমিটির অন্য সদস্যদের উপেক্ষা করে একক রাজত্ব ও আয়ের টাকা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছেন-এমন অভিযোগসহ আরো নানা অভিযোগ তুলে ধরে গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন পঞ্চায়েত ও এলাকাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভার্থখলা স্বর্ণালী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম সাহেদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ভার্থখলা জামে মসজিদ আয়ের দিক থেকে নগরীর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট এর সম্পত্তি এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রস্তাবে পাঁচ সদস্যের কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০০৩ সালে ভার্থখলার বাসিন্দা মিছবাহ উদ্দিন আহমদকে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব দেন এলাকাবাসী। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করছেন। অন্য সদস্যদের পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।’
পঞ্চায়েত সদস্যদের পক্ষে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর সাধারণ সভা করে বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়ার কথা। বিগত ২২ বছরে একবারও তিনি তা করেননি। মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দানের টাকার হিসাব উপস্থাপনের পাশাপাশি ব্যাংকে জমা রাখার কথা। তিনি তা করছেন না। এমনকি, প্রায় সাত মাস অসুস্থ থাকাবস্থায় কমিটির অন্য সদস্যদের উপেক্ষা করে তিনি নিজের ছেলেকে দিয়ে মসজিদ পরিচালনা করিয়েছেন।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মোতাওয়াল্লীর অপসারণের দাবি তুলেছেন ভার্থখলা এলাকাবাসী ও পঞ্চায়েত সদস্যরা। এ দাবিতে ইতোমধ্যে ঢাকাস্থ ওয়াকফ এস্টেট এর প্রশাসকসহ সিলেটের প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এর আগে, মোতাওয়াল্লী মিছবাহ উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে কমিটির তিনজন সদস্য পদত্যাগ করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওয়াকফ প্রশাসন মোতাওয়াল্লীর কাছে কারণ দর্শানোর চিঠি দিলেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু উপেক্ষা করে তিনি এখনও মোতাওয়াল্লীর পদ আঁকড়ে রাখতে মরিয়া। গত ৭ মে মসজিদ কমিটির জীবিত তিন সদস্য আব্দুল আহাদ, আব্দুল কাহার চৌধুরী (মঈন) এবং শাহ মুজিবুর রহমান (জাহাঙ্গির) অব্যাহতিপত্র জমা দেন। মোতাওয়াল্লীর অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তারা ভার্থখলা জামে মসজিদ কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন বলে উল্লেখ করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘মিছবাহ উদ্দিন আহমদ মসজিদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবছর মসজিদের দোকান কোঠার ভাড়া, দানবাক্সের আয়, প্রতি জুমআর দান, কোয়ার্টার ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতের আয়ের হিসাব না দিয়ে নিজের মতো করে তছরুপ করছেন। পঞ্চায়েতের কোনো মতামতকে তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না। মূলত- অর্থের লোভে তিনি এ পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।’
সম্প্রতি ‘পঞ্চায়েত সদস্যরা মসজিদের দানবাক্স ও জুমআর দিনের দানের টাকা একত্রিত করে এক মাসে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা দেন। বছরে বিভিন্ন খাত থেকে অন্তত ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় হয় বলে তারা জানান। আয়ের খাতগুলো উল্লেখ করে তারা একটি হিসাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে- ১২০টি দোকান থেকে মাসে জমিদারি ভাড়া প্রায় অর্ধ লক্ষ, পাবলিক টয়লেটের ভাড়া ৫ হাজার দুশ, মসজিদ কোয়ার্টার ভাড়া ১৪ হাজার, মাছ বাজার থেকে ২ হাজার, বাবনা পয়েন্টের চারটি দোকানের ভাড়া ২ হাজার, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত কমপক্ষে ১২ হাজার, চার জুমআ’র ৩২ হাজার টাকা এবং নিলামসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাত থেকে ৬ হাজার টাকাসহ মাসে সর্বনি¤œ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়।’
‘মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনের বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাদ দিয়ে মাসে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। উদ্বৃত্ত টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা থাকলেও মোতাওয়াল্লী নিজের পকেট ভারী করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মসজিদ মার্কেটের দোকানের মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত লাখ লাখ টাকা তার পকেটে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বছরে কয়েক লাখ টাকা তার পকেটে যাচ্ছে এবং তিনি ব্যক্তিস্বার্থে টাকা খরচ করে যাচ্ছেন।’
এ অবস্থায় গত ১৭ মে মসজিদের ২য় তলায় ভার্থখলা পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০০ মুসল্লীর উপস্থিতি ও সম্মতিতে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে রেজুলেশনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অনুমোদনের জন্য ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
মিছবাহ উদ্দিন আহমদকে অপসারণ ও নতুন কমিটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য ওয়াকফ এস্টেটের প্রতি জোর দাবি জানান এলাকাবাসী। একইসাথে মিছবাহ উদ্দিনের দায়িত্ব পালনকালে মসজিদের অর্থ তছরুপের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভার্থখলা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হাজী মখলিছুর রহমান, সহ-সভাপতি মির্জা মকবুল বেগ, লায়েক আহমদ, আব্দুল হানিফ নানু, আল এহতেশামুল হক মান্না, আহমদুল কবির মামুন, আব্দুল বাছির বাদল, মকসুদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক এম সিরাজ উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক এম এন ইসলাম, মসজিদ কমিটির সদস্য আব্দুল আহাদ, আবুল কাহের চৌধুরী মঈন, শাহ মুজিবুর রহমান জাহাঙ্গীর, পঞ্চায়েত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর সামছুল পাবলো, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই শ্যামল, নির্বাহী সদস্য হুমায়ুন কবির, সদস্য দুলাল আহমদ, বাদল আহমদ, মিন্টু খান, বেলাল আহমদ চৌধুরী ওয়েছ, মির্জা আব্দুল কাদির বেগ, মির্জা আব্দুল জলিল বেগ, মহিউদ্দিন দারা, এখলাছুর রহমান সুমন, আল আমিন রাজু, সৈয়দ মাহদী হাসান, আব্দুল আলিম, আদনান ফেরদৌস বর্ষা প্রমুখ।