কোটা আন্দোলন : পাঁচ দিনে সারাদেশে প্রায় তিন হাজার গ্রেপ্তার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুলাই ২০২৪, ১:০৫:১৩ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : কোটা সংস্কারকে ঘিরে সারা দেশে পুলিশের ওপর হামলা, স্থাপনা ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত পাঁচ দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় তিন হাজার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো অনেককে গ্রেপ্তার করা হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ আজ বুধবার বলেছেন, ডিবি এ পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতের ১৫০ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতা গ্রেপ্তার :
এর মধ্যে বিএনপির দাবি, সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াত-বিএনপির উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম ও ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল।
এ ছাড়া আরো গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বিএনপির নির্বাহী পরিষদের সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রাশেদু্জ্জামান মিল্লাত, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য সামিউল হক ফারুকী, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা। এর বাইরে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
আজ ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যারা রাজধানীতে সহিংসতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ এক হাজার ৭৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
কোন জেলায় কত গ্রেপ্তার
সারা দেশে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে ৩৭৩, বরিশালে ৯৮, দিনাজপুরে ১২, রংপুরে ৩৩, ময়মনসিংহে ৫৫, কিশোরগঞ্জে ১২, নরসিংদীতে ৩১, খুলনায় ১৮, মানিকগঞ্জে ৯, সাভারে ১০০, রাজশাহীতে ৭২, নারায়ণগঞ্জে ৮০ ও গাজীপুরে ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম : পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় ভাঙচুর, হত্যাচেষ্টা, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরকের ব্যবহার করে ক্ষতিসাধনের অভিযোগে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত পরিচয় ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আজ সকালে নগরীর চন্দনপুরা ডিসি রোড থেকে চট্টগ্রামের চকবাজার থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদ হোসেনকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বাবা বজলুর রহমান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি।
চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ১৬ জুলাই নগরীর মুরাদপুর এলাকায় হামিদ সহিংসতায় অংশ নিয়েছিলেন। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করেছি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (পিআর) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গতকাল পর্যন্ত ১৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৩৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বরিশাল : জেলা ও মহানগর বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের ৮০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে কোতয়ালি মডেল থানায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার রাজীব বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্যসচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারসহ ২৭ জন নামধারী ও অজ্ঞাত পরিচয় ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি, হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও মারধর করে জখম এবং বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বরিশাল মহানগরসহ জেলা থেকে গত তিন দিনে বিএনপি-জামায়াতের ৯৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের সবাইকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মহানগর পুলিশের স্টাফ অফিসার সহকারী কমিশনার প্রণয় রায় জানিয়েছেন, চার থানায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা করেছে। এ ছাড়া এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে।
জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁর ১০ থানা এলাকা থেকে গত তিন দিনে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কুমিল্লা : কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় হওয়া ওই তিনটি মামলারই বাদী পুলিশ সদস্যরা।
মামলাগুলোতে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত পরিচয় মিলিয়ে মোট সাত হাজার ২২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বিকেল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৬ জনকে। তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা আসামিকে আসামি হিসেবেই দেখছি। এ ক্ষেত্রে কারো দলীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় দেখা হচ্ছে না।’
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার ঘটনায় ঢাকার কেরানীগঞ্জের দুই থানায় ১৪০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলার পর গত দুই দিনে দুই থানায় ১৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ধরা হচ্ছে : হারুন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকা মহানগরীতে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আমাদের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে কে কিভাবে আগুন লাগায় এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত অনেকের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।