কান্না থামছে না মাদরাসা ছাত্র আয়াতুল্লাহর মায়ের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০২৪, ৩:৩০:১৪ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার গণঅভুত্থানে শহীদ আবু সাইদ কিংবা মীর মুগ্ধের মতো অনেকের নাম দেশবাসী জানলেও নাম না জানা আরও অনেকেই রয়েছেন। যারা প্রাণ হারিয়েছেন। তেমনি একজন মাদ্রাসা ছাত্র আয়াতুল্লাহ।
গত ৫ আগস্ট লংমার্চ ঢাকা কর্মসূচির মিছিলে যোগ দিয়ে গাজীপুরে কালিয়াকৈরে আনসার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার এই তরুণ। ১১ দিন মর্গে থাকার পর বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় পরিচয় সনাক্ত হলে ১২ দিন পর গ্রামের বাড়িতে সমাধিস্থ হন এই শহীদ। সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় আয়াতুল্লাহর মা শুভা আক্তার। কান্না থামছে না অসহায় পরিবারের স্বজনদের। শহীদ আয়াতুল্লাহ’র মায়ের আহাজারিতে কেঁেপ উঠছে জলুষা গ্রামের মাটি। প্রতিবেশীরাও তার কান্না থামাতে গিয়ে ফিরছেন অশ্রুসিক্ত নয়নে। পরিবারের মেধাবী সন্তানকে হারিয়ে শোকে কাতর স্বজনরা। এমন বীর সন্তানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। করছেন কবর জিয়ারত।
আয়াতুল্লাহ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের জলুষা গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি তার বড় ভাই সোহাগের সঙ্গে কালিয়াকৈরের জামতলা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। আয়াতুল্লাহ কালিয়াকৈরের ভান্নারা বাজার এলাকায় মাখলাজুল ইমান নামে একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করার পাশাপাশি একটি টেক্সটাইল মিলে কাজ করতেন। পরিবারের ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে আয়াতুল্লাহ সবার ছোট।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ে নিয়মিত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন আয়াতুল্লাহ (২০)। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর তার বড় ভাই সোহাগ মিয়ার সঙ্গে গাজীপুরের কালিয়াকৈর মৌচাক এলাকা থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির দিকে যায় আয়াতুল্লাহ। মিছিলটি আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে যাওয়া মাত্রই মিছিলের উপর গুলিবর্ষণ করে আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এতে করে মিছিলে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। মিছিলে অংশ নেওয়া সোহাগ মিয়া হারিয়ে ফেলেন তার ভাই আয়াতুল্লাহকে। এর পর থেকে আর খোঁজ মেলেনি আয়াতুল্লাহর। গাজীপুর ও রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল মর্গসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলেনি তার। নিখোঁজের দীর্ঘ ১১ দিন পর গত ১৬ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে খোঁজ মেলে আয়াতুল্লাহর মরদেহের।
নিহত আয়াতুল্লাহর বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে আমার পরিবারের অন্যতম মায়ার সন্তান ছিল। তারে কেমনে ভুলি। তারা দুই ভাই যা আয় রোজগার করতো তা দিয়ে সংসার চালাতাম। এখন কি দিয়ে কি করবো। সরকার কি আমার পাশে দাঁড়াবে?- এমন প্রশ্ন অসহায় বাবার।
স্বজনরা জানান, আয়াতুল্লাহর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন আলেম হওয়ার। ইসলাম ও দেশের জন্য কাজ করার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরার। একজন মেধাবী ছেলের এমন পরিণতি মানতে পারছেননা প্রতিবেশীরা। সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি নি¤œ আয়ের পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়াতুল্লাহর পরিবারের পাশে থাকার কথা জানিয়ে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, পরিবারটি অনেক অসহায়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো। আশা করছি বিত্তবানরাও তাদের পাশে দাঁড়াবেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছি বলে জানান তিনি।