সাতবার বদলির আদেশ হলেও বদল হয়নি কর্মস্থল
সুনামগঞ্জে এলজিইডি’র প্রকৌশলী আরিফুলের ‘বদলি বদলি খেলা’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২:২০:৪০ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী :
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে টানা ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে আছেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম। আছে কমবেশি নানান অভিযোগও।
এরই মধ্যে তাকে অন্য স্টেশনে সাতবার বদলিও করা হয়। কিন্তু, তিনি কখনো বদলি হওয়া নতুন কর্মস্থলে যাননি। যে প্রধান প্রকৌশলী তাকে বদলি করেন ওই প্রধান প্রকৌশলীর নিজের হাতেই তার বদলি স্থগিত করেন। অদৃশ্য ক্ষমতার বদৌলতে তিনি সেই পুরনো জায়গায় আছেন বহাল তবিয়তে। তার ‘বদলি বদলি খেলা’ এখন বিভাগের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এলজিইডি সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামের বদলি নিয়ে সিলেটের ডাকের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এলজিইডি সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন সিলেটের ডাককে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তাকে বেশ কয়েকবার বদলি করা হলেও সব সময়ই বদলির আদেশের পরে আবার ওই বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়।
কেন এমন করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়। কেবল কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
অভিযুক্ত প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দাবি করেন, গত মার্চে একবার বদলি করা হয়। পরে সেটি বাতিল করা হয়েছে। তখনকার সময়ে মূলত ভুলবশত এটি হয়েছিল। সম্প্রতি বদলির পরে আবারও সেটি বাতিল করা হয়।
তিনি জানিয়েছেন, ‘২০১৮ সালের জুলাই মাসে আমি সুনামগঞ্জ এলজিইডিতে যোগদান করি। এটি আমার প্রথম পোস্টিং। আগামীতে পদোন্নতি পেয়ে যাব বলে দাবি তার।’ অভিযোগের বিষয়ে বলেন, কেউ কেউ ইচ্ছে করেই খোঁচাখুঁচি করতে পারে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগও বানোয়াট। প্রশ্নবিদ্ধ করতে, হয়তো কেউ বিতর্কিত করতে এমন বলতে পারে বলে জানান তিনি।
সূত্র বলছে, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ২০১৮ সালের জুলাইয়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সুনামগঞ্জ এলজিইডিতে যোগ দেন।
এরপর একে একে ছয় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে যোগ হয়েছে নানান অভিযোগ। আছে নানান সমালোচনাও। কিন্তু তিনি দাপটের সাথেই আছেন বহাল তবিয়তে।
চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামকে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বর্তমান কর্মস্থল সুনামগঞ্জ এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। কিন্তু, এই আদেশের মাত্র চার দিনের মধ্যেই যিনি তাকে বদলি করেছিলেন সেই চিফ ইঞ্জিনিয়ার আলি আখতার হোসেন তার বদলি বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখা হয়।
এর আগে চলতি বছরের ২৪ মার্চ আরিফুল ইসলামকে এলজিইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার আলি আখতার হোসেন অপর এক আদেশে বর্তমান কর্মস্থল থেকে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি করা হলেও মাত্র চারদিনের মাথায় আবারও ওই আদেশ বাতিল করে বর্তমান কর্মস্থলে বহাল রাখা হয়। তারও আগে ১৪ মার্চ আরিফুল ইসলামকে ছাতক উপজেলায় বদলি করা হলে সেটিও বাতিল করেন এলজিইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার।
এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালেও তার দু’দফা বদলি হলেও সেসময়েও তার বদলি বাতিল করেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার।
এভাবে একের পর এক বদলি আর বদলির কয়েক দিনের মধ্যেই আবার বদলির আদেশ বাতিল হওয়ার বিষয়টি এলজিইডির সিলেট অঞ্চলে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে সচেতন মহল থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কোন সেই অদৃশ্য শক্তির বদৌলতে আরিফুল ইসলাম এভাবে একের পর এক বদলি ঠেকাতে সক্ষম হচ্ছেন এর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসাটা জরুরি।
কোনো ঠিকাদারী চক্র অথবা অন্য কোনো গ্রুপকে সহযোগিতার জন্যে তাকে বদলির পরেও বারবার একই জায়গায় রাখা হচ্ছে কিনা বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজন বলে সচেতন মহল থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এক কর্মকর্তাকে এভাবে বদলি করা হয় আবার চারদিনের মধ্যে আবারও বদলি বাতিলের বিষয়টি নিঃসন্দেহে রহস্যজনক। এর নেপথ্যে কি লুকিয়ে আছে তার বের করতে হবে।