চাপ দিচ্ছি না, কিন্তু সংস্কারের নামে যেন কালক্ষেপণ না হয় : ডাঃ শফিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:১০:৪৬ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন সংস্কার চলছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আপনাদের সংস্কার কাজে গতি বাড়াতে হবে। আপনারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন এটি পুরো জাতির প্রত্যাশা।
তাহলেই আপনারা জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমরা আপনাদের চাপ দিচ্ছি না। কিন্তু সংস্কারের নামে যেন কালক্ষেপণ না হয়, সেদিকেও আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে জামায়াতের কর্মিসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রকাশ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করে কুমিল্লা মহানগর জামায়াত। নারীদের জন্য নগরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে পৃথক প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘এই জাতি গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ভোট দিতে পারেনি বলে তরুণদেরও আক্ষেপের শেষ নেই। আমরা চাই, আগামীর বাংলাদেশে যুবকেরা শুধু ভোটই দেবেন না, তারা জাতিকে নেতৃত্বও দেবেন।’ বক্তব্যের শুরুতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
জামায়াতের আমির বলেন, গত সাড়ে ১৭ বছর জাতির জন্য একটি শ্বাসরুদ্ধকর সময় ছিল। মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারেনি। দেশপ্রেমিক মানুষকে, দেশপ্রেমিক বিভিন্ন বাহিনীকে এই সময় ধ্বংস করা হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে এক মাসের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনাসদস্যকে হত্যা করা হয়, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। লাইট অফ করে রাতের আঁধারে খুনিদের পিলখানা থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে দুই-তিনটা তদন্ত কমিশন হলো, কিন্তু কিছুই জাতিকে জানতে দেওয়া হয়নি।
এমনকি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও জানতে দেওয়া হয়নি তাদের সহকর্মীদের কেন হত্যা করা হয়েছে। কারণ, সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে? ওই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
দেশপ্রেমিক বিডিআর ছিল সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী, তাদের বিজিবি নাম দিয়ে সীমান্তের চৌকিদার বানানো হয়েছে।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারাই দেশপ্রেমিক ছিলেন, বিগত সময়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ পালাবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ হত্যা করেছে। ৫ আগস্টের পর আমরা বলেছি, আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রতিশোধ নেব না। কিন্তু আমরা প্রতিটি ঘটনার বিচার চাই।
যারা এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, সবাই এই দেশের নাগরিক। এ দেশের সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই। বিগত সময়ে এ দেশের অন্য ধর্মের মানুষকে সংখ্যালঘু বলে বৈশ্বিক দরবারে ফায়দা লুটে নেওয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, সবাই এ দেশের নাগরিক, কেউই সংখ্যালঘু নয়।
ভারত প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে আমরা তো হস্তক্ষেপ করিনি। এরপরও তারা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করছে।
কিন্তু তারা কতটা উগ্র, সেটা সবাই জানে। চট্টগ্রামে একটি উগ্রবাদী সংগঠন একজন আইনজীবীকে হত্যা করেছে।
এরপরও এ দেশের মানুষ আইন হাতে তুলে নেয়নি। আমরা ধন্যবাদ জানাই প্রধান উপদেষ্টাকে। তিনি সব ধর্মের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে বলেছেন, এ দেশ আমাদের সবার।
তিনি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন। আমরা চাই, প্রধান উপদেষ্টার এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। আর ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আমরা তাদের কোনো আগ্রাসনকে সহ্য করব না।
কর্মিসম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মু. তাহের। কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা আবদুল হালিম, নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসাইন, মুহাম্মদ আবদুর বর, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার প্রমুখ।