বজ্রপাতে সতর্কতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০০:১৬ অপরাহ্ন

বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। গত মঙ্গলবার বজ্রপাতে সিলেটের তিন জেলায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মওসুমটাই বলা যায় বজ্রপাতের। আকাশে ঘন কালো মেঘের গর্জন আর সেই সঙ্গে ঘটছে বজ্রপাত। ঋতু পরিক্রমায় বসন্ত এখনও শেষ হয়ে যায় নি। আকাশে মেঘের গর্জনের সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকালেই জনমনে সৃষ্টি হয় বজ্রপাতের আতঙ্ক। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, স্বাভাবিক ইলেক্ট্রিসিটির চেয়ে বজ্রপাতের ক্ষমতা কয়েক হাজার গুণ বেশি। ফলে বজ্রপাতে আহত হলে মারা যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। জানা গেছে, বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সারা বিশ্বে বাংলাদেশেই বেশি। তবে দেশে বজ্রপাতে বছরে কতোজনের মৃত্যু হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। প্রতি বছরই বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
আমাদের দেশে বজ্রপাতের আতঙ্ক বিরাজ করে পুরো গ্রীষ্ম ও বর্ষা মওসুম জুড়ে। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, বর্ষা মওসুমে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪০টি বজ্রপাত আঘাত হানে। সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তনে জলীয় বাষ্পে কালো মেঘের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য ‘আকাশে কালো মেঘ দেখলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। তাছাড়া, গ্রামাঞ্চলে ফাঁকা জায়গায় বজ্রপাত বেশি হয়। তাই বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে এসব জায়গায় উঁচু বাঁশের সঙ্গে বিদ্যুৎবাহী তার স্থাপন করা যেতে পারে। এতে বজ্রপাতে মানুষ ও গাছপালার ক্ষতির পরিমাণ কমবে। আবহাওয়া বিজ্ঞানিদের মতে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ মাইল উচ্চতায় কালো মেঘের ওপরে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। আর এই কালো মেঘ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যুৎ ও বজ্রপাত। বর্ষা মওসুমের শুরু ও শেষ দিকে এই কালো মেঘের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এপ্রিল-মে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বেশি।গবেষণায় দেখা গেছে, আকাশে যেখানে মেঘ সৃষ্টি হয় তার ২৫ থেকে ৭৫ হাজার ফুটের মধ্যে বজ্রপাত ঘটে বেশি। আর প্রতি সেকেন্ডে ৬০ হাজার মিটার গতিতে বজ্র বিদ্যুৎ নিচে নেমে যায়। প্রতিটি বজ্রপাতে ৫০ হাজার এম্পিয়ার বিদ্যুৎ শক্তি থাকে। যেখানে একটি বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ চলে গড়ে মাত্র ১৫ এম্পিয়ার-এ। আর একটি বজ্র কখনও কখনও ৩০ মিলিয়ন ভোল্ট নিয়ে আকাশে জ্বলে ওঠে। এই বিপুল পরিমাণ তাপসহ বজ্র মানুষের দেহে আঘাত লাগার সাথে সাথেই তার মৃত্যু হয়। বিজ্ঞানিদের মতে, উষ্ণ, আর্দ্র ও শীতল জলীয় বাষ্পের পারস্পরিক সংঘর্ষে জন্ম হয় বিদ্যুৎশক্তির। এই বিদ্যুৎ শক্তি বৃদ্ধিতে আকাশে দেখা দেয় আলোর ঝলকানি।প্রকৃতিগতভাবেই বায়ুমণ্ডলে বিদুৎ সৃষ্টি হয়ে মেঘে জমা থাকে। এই বিদ্যুৎ মেঘে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ হিসেবেই বিদ্যমান থাকে। বিপরীতধর্মী বিদ্যুৎ শক্তির দুটি মেঘ কাছাকাছি এলেই পারস্পরিক আকর্ষণে চার্জ বিনিময় হয়। ফলে বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘের নিচের অংশে ঋণাত্মক চার্জ গ্রহণ করে। আর ভূ-পৃষ্ঠ থাকে ধনাত্মক চার্জ। দুই চার্জ মিলিত হয়ে ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রচণ্ড বেগে ওপরে উঠতে থাকে; সৃষ্টি হয় উজ্জ্বল আলো। এটিই বজ্রপাত। বজ্রপাতের তাপমাত্রা ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বজ্রপাতের ব্যাপারে সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি। তাই মওসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাক্কালে আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সতর্ক হতে হবে। গুড়ু গুড়ু মেঘের ডাক শুনলেই নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া উচিত। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেয়া নিরাপদ। গাড়ির ভেতরেও আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। তবে গাছের নিচে, টেলিযোগাযোগের খুঁটির পাশে, বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের খাম্বার পাশে দাঁড়ানো নিরাপদ নয়। ফাঁকা মাঠে অবস্থান নিরাপদ নয়। পানির সংস্পর্শে থাকাও উচিত নয়। বৃষ্টির মধ্যে ঘরের বাইরে মোবাইল ফোন ব্যবহারে বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বজ্রপাতের আওয়াজ কানে আসার আগেই তা ভূমি স্পর্শ করে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকেও স্পর্শ করা বিপজ্জনক। এ ক্ষেত্রে শুকনো কাঠ ব্যবহার করা যেতে পারে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস আবহাওয়া বিভাগের রাডারে ধরা পড়ার কথা। কিন্তু অনেক সময়ই আমাদের আবহাওয়া বিভাগ সেই পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরকে সচেতন হতে হবে।