ঢাকাদক্ষিণ-হেতিমগঞ্জ সড়কে ৩ বছর থেকে যান চলাচল বন্ধ!
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৪৭:০৩ অপরাহ্ন

ইউনুছ চৌধুরী :
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ-হেতিমগঞ্জ সড়কে প্রায় ৩ বছর থেকে সিলেট শহরের সাথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজের সময় ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙার পর সৃষ্ট জটিলতায় সেভাবে ফেলে রাখা হয়েছে ৩ বছর থেকে। পুলটি পুণঃনির্মাণে এলজিইডি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পরস্পরকে দায়ী করছে।
এদিকে, গোলাপগঞ্জসহ বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলা থেকে সিলেট শহরে যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সিলেটের সাথে গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণ করে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা না হলে আন্দোলনে নামবেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকাদক্ষিণ-হেতিমগঞ্জ সড়ক (দেওয়ান সড়ক) সিলেট শহরের সাথে যোগাযোগের বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহত হয়। দীর্ঘদিন ক্ষতিগ্রস্ত থাকার পর ২০২২ সালে সড়কটি সংষ্কার ও প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়। এসময় সড়কের বাউশী এলাকায় দেওরভাগা খালের উপরে পুরনো ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙে নতুন কালভার্ট নির্মাণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পুলটি অনেকটা ভেঙ্গে ফেলার পর একে ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবে রক্ষার দাবি উঠে। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ব্রীজটি সেইভাবে পড়ে আছে। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুলটি পরিদর্শন করে গেলেও এখন পর্যন্ত সেভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে। এলজিইডি সিলেটের নির্র্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর জানান, তারা সড়কটি উন্নয়ন করতে গিয়েছিলেন। তখন পুরাকৃর্তি বলায় কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে জানানো হয় এটা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দেখবে। তাই পুরো কাজটিই বাতিল করে দেয়া হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বলছে ‘তারা প্রথমে সংরক্ষিত পুরাকৃর্তি ঘোষণা করবে পরে সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’ জানান ফিল্ড অফিসার সঈদ ইনাম তানফিরুল।
এদিকে, যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগে মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে স্থানীয়দের অনেকেই ভাষা হারিয়ে ফেলেন। বছরের পর বছর গাড়ি চলাচল বন্ধ, হাট-বাজারে যাতায়াতে দুর্ভোগ, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া আসায় গাড়ি না পেয়ে চরম দুর্গতি, বৃদ্ধ ও নারীদের সীমাহীন কষ্টের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তারা চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে রোগীদের নিয়ে যাওয়া আসায় বর্ণনাতীত দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা। বারোকোট এলাকার এক মুরুব্বি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন ‘দুর্ভোগের কথা কী আর বলবো। ডাক্তার দেখানের জন্য ঢাকাদক্ষিণ গিয়েছিলাম, রাস্তার কষ্টের কারণে এখন ডাক্তার দেখাতে যেতেও ভয় লাগে।’
বারকোট মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা শিব্বির আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ব্রিজ ভাঙ্গা এবং রাস্তার অবস্থা বেহাল হওয়ায় যাতায়াতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের দাবি খুব দ্রুত বিজটি সংস্কার অথবা নতুন করে নির্মাণ করা এবং রাস্তাটির প্রশস্থ বৃদ্ধিসহ সংস্কার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
‘ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এবং ব্রিজ ভাঙা থাকায় সড়কটি প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে আছে। কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলেই নিশ্চিত দুর্গতি। বছরের পর বছর অবধারিত দুর্ভোগ থেকে এলাকাবাসী মুক্তি চায়।’-বলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও এক অফিসের কর্মকর্তা মাসুদ আহমদ। দ্রুত ব্রিজটি করে দেয়ার প্রবল আকুতি জানিয়ে ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী লিমন আহমদ বলেন, পরিত্যাক্ত পুল দিয়ে এখন কোন ভাবেই যাতায়াত করা যাচ্ছে না। পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তারা। জরুরি প্রয়োজনে পুলের ভাঙা অংশে বাঁশ ও টিন দিয়ে পাটাতনের মতো বসিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একাধিক সিএনজি চালক জানান, সড়কটি বন্ধ হওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগের পাশাপাশি সকল গাড়ি গোলাপগঞ্জ হয়ে সিলেট শহরে যেতে হচ্ছে বলে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুইদিক থেকেই ক্ষতি হচ্ছে। ’গোলাপগঞ্জ তথা সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি যেন এখন স্থানীয়দের জন্য দু্স্বঃপ্ন হয়ে উঠেছে। এটা যেন একটি ধ্বংসস্তূপ’-বলেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক আখতার হোসেন লাল মিয়া। তিনি বলেন, মনে হয় এটাই নিয়তি, নির্বিচারে মেনে নেয়া ছাড়া কিছু করার নেই। এতো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দীর্ঘদিন থেকে সিলেটের সাথে গাড়ি চলাচল বন্ধ, অসংখ্য মানুষের কষ্ট দুর্ভোগ, বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি কিন্তু কারো যেন পরোয়াই নেই। ‘শুধু দুর্নীতির বিরুদ্ধেই নয়, ভুল সিদ্ধান্ত, অবহেলা, জনগণের কষ্ট-দুর্ভোগ এবং সরকারের সম্পদ নষ্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জবাববদিহিতা ও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা বৈষম্যবিরোধী সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। -বলেন আখতার হোসেন লাল মিয়া। তিনি সড়কটি দ্রুত সংস্কার ও ব্রিজ নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না করলে এলাকাবাসীকে নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কথা জানান তিনি।