কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের ওপর ট্রাক শ্রমিকদের হামলা, ১৫ জনকে আসামি করে মামলা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ৮:২৮:৪৩ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনের চেকপোস্টে এ ঘটনা ঘটে। এতে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমদের নেতৃত্বে ট্রাক শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকরা এ হামলা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মাহফুজকে প্রধান করে ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০/৮০ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- কোম্পানীগঞ্জ থানার এএসআই আব্দুল হামিদ, কনস্টেবল আজিজুর রহমান, দীপংকর হাজং, শহীদ আহমেদ ও মাসেক মিয়া।
জানা যায়, রোববার সকালে নিয়মিত গাড়ি চেক করার সময় পুলিশ একটি ট্রাক আটক করে। পরে ওই ট্রাক ছাড়িয়ে নিতে এসে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেন উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমদ। তিনি সেখানে বাসে করে তার শ্রমিক ও নেতাদের নিয়ে এসে পুলিশের ওপর হামলা করেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রমিক নেতা মাহফুজ বাস থেকে নেমেই পুলিশের ওপর হামলে পড়েন। দুইজনকে ধাক্কা দিতেও তাকে দেখা যায়। এসময়ই ওই ট্রাকটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, অবৈধ বালু পাথর পরিবহনের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে পুলিশ নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে বালুবোঝাই ১ টি ট্রাক আটক করা হয়। বালুর বৈধ কাগজ দেখতে চাইলে বাকবিতন্ডায় জড়ায় ট্রাকের ড্রাইভার। এর কিছুক্ষণ পর সাদাপাথর পরিবহনের একটি বাসে করে ৩০-৪০ জন এসে পুলিশের উপর হামলা করে ট্রাক ২টি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে তাদেরকে কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর এসময় তাদের কাছ থেকে ট্রাকটি ছিনিয়ে নেন শ্রমিক নেতারা।
এবিষয়ে কোম্পানীঞ্জ উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমদ জানান, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির নেতৃত্বে এখানে চাঁদা আদায় করার জন্য চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আমাদের এক শ্রমিক মাটি ভর্তি ট্রাক নিয়ে যাচ্ছিল। তখন পুলিশ সেটা যেতে না দিয়ে আটকে দেয়। তখন পুলিশ বলে ৫ হাজার টাকা দিলে ট্রাক ছাড়বো নাহলে না। পরে আমাদের চালক আমাকে ফোন দিলে আমরা সেখানে গিয়ে এবিষয়ে কথা বলি আর তখন পুলিশ আমাদের সাথে হাতাহাতি করে। এসময় ওই ট্রাক চালক তার ট্রাক নিয়ে চলে যায়।
এবিষয়ে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করা থানার এএসআই আব্দুল হামিদ জানান, আমরা চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকালে বালু নিয়ে একটি ট্রাক আসে। তাকে বৈধ বালুর কাগজপত্র দেখাতে বললে সে দেখাতে পারে নি। পরে আমরা ট্রাকটিকে আটকে সেখানে রাখি। পরে দেখলাম ওই চালক কাকে ফোন দিচ্ছে আর এর ১৫/২০ মিনিট পরে ট্রাক শ্রমিক নেতা মাহফুজের নেতৃত্বে একদল লোক এসে আমাদের ওপর হামলা করে। সেখানে আমরা ৫ জন আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নেই। উপজেলার লিজবহির্ভূত ধলাই নদীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ও অবৈধ পাথর বিক্রি করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেগুলো এই চেকপোস্টের মাধ্যমে আটক করা হয়। সাদাপাথর লুট ঠেকাতে এই অভিযান চলমান।
এবিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ জানান, বালু ও পাথরবোঝাই ২টি ট্রাক আটক করে বালু-পাথর ও গাড়ির কাগজপত্র পুলিশ দেখতে চাইলে চালকরা সেটা দেখাতে পারে নি। পরে ওই চালক ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমদকে খবর দেয়। কিছুক্ষণ পর মাহফুজের নেতৃত্বে ২ গাড়ি শ্রমিক এসে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করে গাড়ি নিয়ে যায়। তারা চাচ্ছে এখানে যাতে কোনো পুলিশ চেকপোস্ট না থাকে। পুলিশ কেন তাদের কাছে টাকা চাইবে? সাদাপাথর লুট ও অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে পুলিশ কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় রোববার রাতে এএসআই আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে মাহফুজকে প্রধান করে ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০/৮০ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে।




