নগরীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ গাড়ি ভাঙচুর, আটক ৬
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ৪:১০:১০ অপরাহ্ন
# বিভাগের অন্য তিন জেলায় অবরোধে পিকেটিং
স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশের মতো সিলেটে বিএনপি জামায়াতের অবরোধের ২য় দিন অতিবাহিত হয়েছে। সিলেট বিভাগে পালিত হয়েছে হরতাল। গতকাল বুধবার সিলেট নগরীতে হরতাল-সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। বেলা ১২টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হরতাল সমর্থক ৬ জনকে আটক করেছে। বিভাগের অন্যান্য জেলায়ও হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করেছে সমর্থকরা। মঙ্গলবার অবরোধ চলাকালে যুবদল কর্মী জিলু আহমদ দিলু নিহতের ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হারতাল আহ্বান করে জাতীয়তাবাদী যুবদল। হরতালে বিএনপিও সমর্থন দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকাল থেকে হরতাল সমর্থক ও বিরোধীদের সক্রিয় দেখা যায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে। বেলা ১১টার দিকে হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে বিএনপি-ছাত্রদল, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে বন্দরবাজার এলাকার করিম উল্লাহ মার্কেটের সামনে যান। সেখানে হরতাল-সমর্থকরা মহাজনপট্টির মুখে একটি প্রাইভেট কার ও পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন। এ সময় সেখানে অবস্থানরত পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। তখন পুলিশের জনবল কম ছিলো।
অন্যদিকে একই সময়ে হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুটি মিছিলও সেখানে যায়। হরতাল আহ্বানকারী-বিরোধী দুই পক্ষ তখন মুখোমুখি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে মৃদু সংঘর্ষও হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় এলোপাতাড়ি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা এ অবস্থা চলার পর ছাত্রলীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা যুক্ত হয়। তার সাথে পুলিশ মিলে এ্যাকশনে গেলে হরতাল সমর্থকরা সঁটকে পড়েন। পরে সিলেট কতোয়ালি থানার অধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের ৬জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের নাম ঠিকানা জানানো হয়নি।
অপরদিকে, দক্ষিণ সুরমায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের আলীনগর-সাবসেন এলাকায় বেলা এগারোটার দিকে বিএনপির সাথে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি-ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠনো হয়েছে। তবে তাদের কারোরই নাম-পরিচয় পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করেছে। এতে একজন আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। শেষে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
অন্যদিকে, সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যায়নি কোন বাস। নগরীতে মানুষের উপস্থিতিও স্বাভাবিক দিন থেকে ছিল কম। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নিত্যপণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ি সামান্য পরিমাণে চলতে দেখা গেছে।
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, যাত্রী নেই, তাই সিলেটে কোনো বাস চলছে না। তাছাড়া পথে বের হলে গাড়ির ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তাই পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি নিয়ে বের হতে চাচ্ছেন না।
অপরদিকে, মঙ্গলবার সকালে সিলেটে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল করেছে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম জানান, সিলেটের সঙ্গে সারাদেশেরে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন আসা-যাওয়া করছে।
অন্যদিকে নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় পিকেটিং করে মহানগর বিএনপি। এতে নেতৃত্ব দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, বন্দরবাজারে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন কিছু ধাওয়ার ঘটনা ছাড়া সিলেটে এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানান, এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে অবরোধ-হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করে একটি কাভার্ডভ্যান ও অটোরিকশা ভাঙচুর করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে সকালে দিরাই সড়কে টায়ারে আগুন দেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ঝটিকা হামলা চালিয়েই বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যান তারা। ভাঙচুরের খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশের একটি দল এলেও ভাঙচুরকারীরা সবাই পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দিরাই সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সি ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে।
মৌলভীবাজার: সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিলু আহমদ দিলুকে পুলিশি হেফাজতে হত্যা ও সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মনসুর শওকতসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সিলেট বিভাগে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে যুবদলের নেতাকর্মীরা। সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গিয়াসনগর বাজার এলাকায় হরতাল সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে মৌলভীবাজার জেলা যুবদল।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী পথসভায় যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিলেট বিভাগীয় সহ সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুনসহ নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন বলেন, যুবদল নেতা জিলুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধু যুবদল নেতা জিলু নয়, সকল হত্যাকা-ের বিচার একদিন বাংলার মাটিতেই হবে। এ গণবিরোধী সরকারকে দেশের মানুষ আর চায় না। আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন। এদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই বন্দুকের জোরে গোটা জাতিকে ভয় দেখিয়ে অবৈধ দখলদাররা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুরে এ বিক্ষোভ করেন তারা। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদের নেতৃত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মো. ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদসহ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে জেলা সদর থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়। তিনি বলেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছাড়া হয়নি। তবে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করছে।
পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি বলেন, জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ মহাসড়কে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে।
জেলা ও মহানগর বিএনপির অভিনন্দন
যুবদলের ডাকা গতকালের হরতাল এবং দ্বিতীয় দিনের অবরোধ সফল করায় সিলেটবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসাইন চৌধুরী এক যুক্ত বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান।