সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
শাল্লায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের জমি দখলের অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ৫:০৭:০৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদারের বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতা, স্কুলের জায়গায় ঘর নির্মাণ ও উন্নয়নের টাকা আত্মসাতের’ অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলের সাবেক শিক্ষকরা। তারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা, স্কুল থেকে বদলি এবং স্কুলের জমি উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চিন্তাহরণ চৌধুরী বলেন, ‘দুই বছর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) কাজল কান্তি চৌধুরীর মৃত্যুর পর সহকারী শিক্ষক শৈলেন চন্দ্র তালুকদার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। অথচ তিনি বিভাগীয় মামলায় শাস্তিস্বরূপ তিরস্কারপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তাপস কুমার রায়কে অবহিত করা হলেও তিনি রহস্যজনক কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি স্কুলের জমিতে গৃহনির্মাণ, স্কুল আঙিনায় পারিবারিক সবজি বাগান স্থাপন, ম্যানেজিং কমিটিতে নিজের স্ত্রীকে আন্তর্ভুক্তি, উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, ‘২০২১-২২ অর্থ বছরে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিদ্যালয়ে উন্নয়ন খাতে দেয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৩০ হাজার টাকা রঙের কাজে ব্যয় করা ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। বাকি টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার রায় ও শৈলেন চন্দ্র তালুকদার মিলে আত্মসাৎ করেছেন।’
তারা বলেন, ‘১৯৮৫ সালে রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চালু হয়। যখন সরকারিভাবে বিদ্যালয়টির বিল্ডিং বরাদ্দ হয়, তখন রেজিস্ট্রার বিদ্যালয়টির জায়গা কম থাকায় বিল্ডিং পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক গ্রামবাসীকে ডেকে বিষয়টি জানালে ব্রজগোবিন্দ তালুকদার আরও ৫ শতাংশ জায়গা দান করেন। পরে, বিদ্যালয়ে নতুন স্কুল ভবন বরাদ্দ হয় এবং ভবন তৈরি করা হয়।’
২০০৭ সালে নতুন বিল্ডিং-এ ক্লাস শুরু হয়। এসময় প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে আসেন কাজল কান্তি চৌধুরী। তিনি হঠাৎ মারা গেলে তদবির করে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পান শৈলেন চন্দ্র তালুকদার। তিনি প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে আসা মাত্রই স্কুুলের খালি ভিটাতে জোরপূর্বক নিজের স্থায়ী ঘর তৈরি করেন।’
গ্রামবাসী বলেন, ‘স্কুলের বিল্ডিং বাদে, সমস্ত জায়গাই শৈলেন জোরপূর্বক বিভিন্ন ফসলাদির বাগান করে ভোগদখল করছেন। গ্রামবাসী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তাপস কুমার রায় বরাবর অভিযোগ করার পর তিনি পরিদর্শন করে সবকিছু দেখে-শুনেও ব্যবস্থা নেননি। পরে নতুন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুস সালাম এর কাছে অভিযোগ দেয়ার পর তিনি গ্রামবাসীকে কথা দিয়েছেন বর্ষা গেলে তিনি বিদ্যালয়ের জায়গার ম্যাপ দেখে দখলীয় জমি উদ্ধার করে দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।’
এছাড়া, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে নতুন বরাদ্দকৃত টিউবওয়েলটি স্কুলের নিজস্ব জায়গায় না বসিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব রান্নাঘরের পাশে স্থাপন করেছেন।
‘২০১৯ সালে অভিযোগের পর ডিপিও জিল্লুর রহমান তাকে শাস্তি স্বরূপ ডেপুটেশন বদলি করে আটগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠালে বদলির আদেশ অমান্য করে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের (দীন মোহাম্মদ) সহায়তায় শিবপুর স্কুলেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।’
‘এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিপিও শিক্ষক শৈলেন তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন এবং বিভাগীয় মামলায় শিক্ষককে তিরস্কার দ-প্রদান করেন। কিন্তু তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর পর তিরস্কারে দ-িত শিক্ষককে কিভাবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় স্নাতক ডিগ্রীধারী মহিলা বিদ্যুৎসাহী সদস্য পদে অনুমোদন আনার জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু শিক্ষক শৈলেন নিজের স্ত্রীকে (এসএসসি) মহিলা বিদ্যুৎসাহী সদস্য করেন। এ ব্যাপারে অভিভাবকরা ডিপিও মোহনলাল বাবু বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকেশ রঞ্জন তালুকদার, শিবপুরের বাসিন্দা হিল্লোল সরকার, সুশীল তালুকদার, রাখাল দাশ প্রমুখ।