সুন্দরবন দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩১:২৩ অপরাহ্ন
ইছমত হানিফা চৌধুরী :
কোন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে প্রয়োজন হয় দিবস। এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে যেকোন বিষয়ে উন্নতি সাধন সহজ হয়। মানুষ প্রকৃতির অংশ। কিন্তু নিজের আরামের কথা চিন্তা করে আমরা প্রকৃতিকে ধংস করে চলেছি। আমাদের সুন্দরবন আমাদের অহংকার।
সুন্দরবনের অপর নাম কী? সুন্দরবন স্থানীয়ভাবে বাদা বা বাদাবন, হুলোবন, শুলোবন, মাল, মহাল হিসেবে পরিচিত। বাদা মানে জোয়ার-ভাটা বয়ে যায় যে বনে। ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় এই বাদার নাম হয়ে যায় মহাল, মধুমহাল, গোলমহাল। বাংলায় সুন্দরবন -এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরবনে মোট আয়তন প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার।
সুন্দরবন দুইটি দেশের মধ্যে অবস্থিত। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে রয়েছে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, পটুয়াখালী ও বরগুনা। ধারণা করা হয় সুন্দরবনের নাম রাখা হয় সুন্দরী বৃক্ষের নাম অনুযায়ী।
সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি প্রশস্ত বনভূমি, যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- বনভূমি। সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রাণ; সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরো ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। যদিও ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আড়ালে হারিয়ে যায় এ দিবসটি। এই দিবসটিকে যতটা উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হয়। সুন্দরবন দিবসকে ততটাই অবহেলা করা হয়। আসুন না আমরা ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসি সুন্দরবনকে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। সুন্দরবনে রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। তবে প্রতিনিয়ত বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশের পরিবেশ। অথচ সুন্দরবনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে আমরা ব্যর্থ। আমরা আমাদের সম্পদগুলো এজন্যই আমাদের সুন্দরবন দিবস নিয়ে এত উদাসীনতা, এত অবহেলা।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, নামমাত্র সুন্দরবন দিবস বা বইয়ের পাতায় লিখা থাকলেই হবে না। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচাতে, সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো তৎপর হতে হবে। চোরাকারবারি, পশুপাখি শিকারি, ভূমিখেকোদের থেকে সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভার মধ্যে এটা সীমাবদ্ধ রাখলে কখনো সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাবে না। এজন্য সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি এর তাৎপর্য প্রান্তিক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে আমাদের সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাঁচাতে প্রয়োজন এর আশপাশে শিল্পকারখানা বন্ধ রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সব শ্রেণির মানুষকে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের প্রিয় এই সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পারব। মনে রাখতে হবে সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচাবে।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক