সিলেটের ছাত্র রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ৪:২৫:৫১ অপরাহ্ন

নজরুল ইসলাম বাসন :
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন আমাদের কিশোর মনে বিরাট দাগ কেটেছিল কারন এই নির্বাচনে পূর্ব-পাকিস্তানের (বর্তমান) বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফুর্ত। কিশোর তরুণরা ও এর থেকে বাদ পড়েনি। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের কিশোর তরুণ মনকে বিপুল ভাবে আলোড়িত ও প্রভাবিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে দেশে এক অস্থির সময়ের শুরু হয়, আমাদের প্রজন্ম এই অস্থির সময়ে বড় হয়েছি। আমি নিজে ও ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সিলেট শহরে ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে ছিলাম। বলা যায় মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই সিলেট শহরের ছাত্র রাজনীতির সাথে আমার সম্পৃক্ততা গড়ে উঠে।
আমাদের চোখের সামনে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসের দিকে ছাত্রলীগ (রব-সিরাজ) এর নেতৃত্বাধীন অংশ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে ঢাকার পল্টন ময়দানে সম্মেলন করে। একই দিনে সিদ্দিকী-মাখনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অপরাংশ মুজিববাদ কে আদর্শ হিসাবে সামনে রেখে রাজনীতি শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান শেখ ফজলুল হক মনির প্রভাবে সিরাজুল আলম খানের বলয়কে অস্বীকার করে বসেন। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরে একটি স্বাধীন দেশে রাজনীতি অস্বাভাবিক পথে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭২ সালে তরুণদের দল জাসদ গঠিত হয়েছিল, ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত জাসদ র্যাডিক্যাল রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে রাজনৈতিক অঙ্গণে বিচরণ করেছিল।

১৯৮০ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সিলেট এসেছিলেন। ছবিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে সিলেট জেলা ছাত্রদলের কয়েকজন।
১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাসদকে একটি এবং জাতীয় লীগকে একটি আসনে জয়লাভ করতে দিয়েছিলো। জাতীয় সংসদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্টতা থাকা সত্বেও ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। সেই থেকে দেশে স্বাভাবিকভাবে সরকার পরিবর্তনের পথরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে ঘটলো অস্বাভাবিক ঘটনা, এক সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব ও ভাগনা শেখ মনি, ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি সেরনিয়াবত সহ মুজিব পরিবারের অনেক সদস্য ও স্বজনদের অনেকে নিহত হলেন। বাংলাদেশে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।
জাতি অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলো বাকশাল সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক দেশের প্রেসিডেন্ট হলেন। কিন্তু তিনি ৯০ দিনের মাথায় ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাই জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় পরিবর্তন করে দেয়। সিপাই জনতা জেনারেল জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে বিপ্লবের নায়কের আসনে সমাসীন করে। সিপাই-জনতার ঐক্যের কাছে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ও কর্ণেল আবু তাহের এ সময় পরাজয় বরণ করেন এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে এখনও যেসব প্রশ্ন আছে যার মীমাংসা আজও হয়নি। আগামী দিনের ইতিহাসে কর্ণেল তাহের ও খালেদ মোশাররফের ভূমিকা নির্ধারিত হবে।
তবে সিপাই জনতার বিপ্লবের ফলে জিয়াউর রহমান সেনা প্রধান হিসাবে দায়িত্বে আসেন, তিনি উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সিলেট জেলা ছাত্র দলের সভাপতি হন এই প্রতিবেদক ও আলমগীর কুমকুম সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে আমরা যখন সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দায়িত্ব নেই তখন ১৯৭৯ সাল, দেশে তখন সাধারণ নির্বাচন। নতুন দল বিএনপি ধানের ছড়া নিয়ে মাঠে নামে, নৌকা নিয়ে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, জাসদসহ স্বতন্ত্র সদস্যরাও নির্বাচনে অংশ নেন। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে বেশীর ভাগ আসনে বিএনপি জয়ী হয়েছিল। আওয়ামী লীগ থেকে ইনামুল হক চৌধুরী, আব্দুল জব্বার ও জাসদ থেকে মাহবুবুর রব সাদী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও স্বতন্ত্র আবুল হাসনাত জয়ী হয়েছিলেন।
সারা দেশে নবগঠিত ছাত্রদল এই নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল, পরবর্তীকালে সিলেট জেলা ছাত্রদল প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শাখা গঠন করে। বিশেষ করে সিলেট মেডিক্যাল কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে আবিভর্‚ত হয়েছিল। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিরাট ভূমিকা রাখে, এমনকি ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল বিজয়ী হয়েছিল। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গঠনের ৩ বছরের মাথায় জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন, দীর্ঘ ৯ বছর ছাত্রদল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছিল। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পতিত শাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মাঠে ছিল। জন্মলগ্ন থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনের মাঠে ছিল। ছাত্রদল এখনও মাঠে রয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায় ছাত্রদল নতুন আঙ্গিকে দিনবদলের রাজনীতিতে শরীক হবে আগামীতে, দেশবাসীর এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : অতিথি সম্পাদক, দৈনিক সিলেটের ডাক।