ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ও আঞ্চলিক শান্তি প্রসঙ্গ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৫, ১:৪৮:১৮ অপরাহ্ন

অ্যাডভোকেট আনসার খান :
এই লেখা যখন লিখছি, ততক্ষণে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা কতটা কার্যকর থাকবে, সে প্রশ্ন সামনে। ভাবা হয়েছিল, দেশ দুটি যুদ্ধে জড়াবে না। হুমকি-ধমকিতেই সীমাবদ্ধ খাকবে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চিরশত্রু পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল।
এই যুদ্ধে জড়ানোর কারণ হলো কাশ্মীর। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার শুরুতেই কাশ্মীরের দখল ও মালিকানার দাবি নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলো দেশ দুটি ১৯৪৮ সালে। কাশ্মীর পাকিস্তান শাসিত ও ভারত শাসিত- এই দুইভাগে বিভক্ত হলো। এই বিভক্তি দুটি রাষ্ট্রের জন্য চিরশত্রুতা, চির সামরিক বৈরিতা এবং চির অশান্তির কারণ হিসেবে দেখা দিল।
দেশ দুটি ইতিপূর্বে তিনটি যুদ্ধ মোকাবিলা করেছে। গত সপ্তাহে শুরু হওয়া যুদ্ধটি বিপজ্জনক এবং ভয়াবহ হতে পারে বলে সামরিক, রাজনৈতিক ও যুদ্ধ বিশ্লেষকরা আভাস দিয়েছেন। কেননা, দুটি রাষ্ট্রের রক্ষিত অস্ত্রাগারে প্রায় সমান সংখ্যক পারমাণবিক সমরাস্ত্র রয়েছে এবং দেশ দুটির হাই লেভেল কর্মকর্তারা বলে চলেছেন প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করতে পিছপা হবে না। ভয়ের কারণ এটিই।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা অনন্তনােেগর মনোরম পর্যটন কেন্দ্র পাহেলগামে গত ২৭ এপ্রিলে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন, যা ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ইতিপূর্বে সংঘটিত সশস্ত্র হামলার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে বর্ণনা করেছেন পর্যবেক্ষকরা। ভারত এ হামলার জবাব দিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। হামলার ঘটনায় সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। ভারতের দাবি, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী, যেটি পাকিস্তান সমর্থিত, তারাই দায়ি। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে পাকিস্তান ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ভারত দাবি করে যে, টিআরএফ হলো পাকিস্তান ভিত্তিক আরেকটি সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী, লস্কর-ই তৈয়বা (এলটিই) এর একটি শাখা। পাকিস্তান ভারতের এই দাবি প্রত্যাখ্যান এবং অস্বীকার করে একটি স্বাধীন তদন্তের আহবান জানিয়েছিলো। স্বাধীন তদন্তের আহবানে সাড়া না দিয়ে ভারত মে মাসের ৬ তারিখে পাকিস্তানের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হিসেবে পাকিস্তানের কাশ্মীর-শাসিত অঞ্চলের অভ্যন্তরে কথিত জঙ্গি শিবিরগুলো লক্ষ করে ভারতের সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযান শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিমন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া কর্মসূচির সিনিয়র ফেলো ও পরিচালক এলিজাবেথ থ্রেল্ডকেল্ড আল জাজিরাকে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রায় দূই দশকেরও অধিক সময়ের মধ্যে আমরা যা দেখেছি তার মধ্যে বর্তমানে চলমান উত্তেজনা সবচেয়ে বিপজ্জনক। এখানে আসলে কে যুদ্ধ শুরু করেছিলো তা নিয়ে কোনো পক্ষই একমত নয়। ভারতীয়রা পাকিস্তানীদের এবং পাকিস্তানীরা ভারতীয়দের দোষারোপ করেছে চলেছে। তবে পাকিস্তান সরকারের নিকট থেকে আমরা যে সংকেত পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে সামরিক প্রতিক্রিয়া আসন্ন ও ধ্বংসাত্মক হবে।
এই সশস্ত্র হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় দুই চিরশত্রু পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা, কথাযুদ্ধ ও সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে বিধায় দেশ দুটির মধ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমনের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এবং পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দেশ দুটির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ও সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িত হয়ে। ইতিমধ্যেই সীমান্তে সামরিক হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় নিরীহ মানুষজন মারা পড়েছেন, উভয় পক্ষই আধুনিক সমরাস্ত্র, তথা ড্রোন ও অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করতে শুরু করেছে, যেটিকে কয়েক দশকের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ দুটির মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে মনে করছেন যুদ্ধ কৌশল বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ করে গত ৬ মে ভারত পাকিস্তানের কাশ্মীর সীমান্তে সশস্ত্র যুদ্ধ-আক্রমণ শুরু করায় দেশ দুটির মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া নিয়ে সামরিক ও যুদ্ধ বিশ্লেষকদের মধ্যে একধরনের তীব্র আশঙ্কা লক্ষ্য করা গেছে। কেননা নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে প্রয়োজনে আনবিক অস্ত্র ব্যবহার করার হুমকি দেওয়া হয়েছে দুটি পক্ষ থেকে। এই ধরনের হুমকি দেওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির নিউলাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর কামরান বোখারী মন্তব্য করেন, পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিগুলোতে ভারতের হামলার কারণে পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়ে পড়েছে। পিন্ডি ও সারগোধার মতো অন্যান্য বিমান ঘাঁটিতে হামলার পরে যুদ্ধ আরও খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে- বলেছেন বোখারী। ‘আমরা আরও বৃহত্তর পরিসরে যুদ্ধের আশঙ্কার দিকে তাকিয়ে আছি’ -বলেন তিনি।
লাহোর থেকে রিপোর্ট করা আল জাজিরার সাংবাদিক ওসামা বিন জাভেদ বলেছেন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন ৬ ও ৭ মে তারিখের মধ্যবর্তী রাত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর রাত। ‘উত্তেজনা প্রশমনের জন্য যতই চেষ্টা করা হচ্ছে, কাশ্মীরের বিভাজনকারী নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে আরও বেশি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে, আরও বেশি যুদ্ধ চলছে।’
এখন, পাকিস্তান ও ভারত যখন একটি সম্পূর্ণ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ তথা পারমাণবিক যুদ্ধের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে, তখন উভয়পক্ষের লাখোকোটি বেসামরিক মানুষজন নিজেদের ভবিষ্যতের পরিণতি ভেবে দিশেহারা অবস্থায় সশস্ত্র গোলাগুলি, ড্রোনের ও বিমান আক্রমণের সাইরেনের ভয়ংকর শব্দে ব্ল্যাকআউট ও বিদ্যুৎহীন অন্ধকার রাত্রে ভয়ার্ত চেহারায় নিদ্রাহীন দিনযাপন করছেন। মানুষজন প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ মৃত্যুর ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে দেখতে জীবনে বেঁচে থাকার অনিশ্চিত অবস্থা উপলব্ধি করে চলেছেন। কতিপয় শ্রেণীর কিছু মুনাফালোভী ও ক্ষমতালোভী মানুষের কারণে দুটি দেশের নিরপরাধ মানুষের জীবন, সম্পত্তি আজ অনর্থক চাপিয়ে দেওয়া এক যুদ্ধের কারণে বিপদজনক অবস্থায় নিপতিত হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তান ও ভারত- দেশ দুটি পরস্পরের প্রধান শহর ও সামরিক স্থাপনাগুলিতে ড্রোন ও যুদ্ধ বিমানের মাধ্যমে আক্রমণ করে চলেছে, যদিও আক্রমণের জন্য দেশ দুটি পরস্পরের প্রতি অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করছে, যদিও সত্য-মিথ্যার আবরণে কোনোদিনও প্রকৃত সত্য জানা যাবেনা হয়তো। তবে এটি সত্য যে, দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি খুব দ্রুতই বদলে যাচ্ছে, ঘন ঘন সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে, শহরগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভয়ংকর অন্ধকার রাত নেমে আসতে দেখা গেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিতর্কিত কাশ্মীরকে বিভক্তকারী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর নির্বিচার গোলাবর্ষণে ওখানকার বাসিন্দারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেঁচে থাকতে শেষ চেষ্টা করছেন।
সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর অনেক বাসিন্দা বলেছেন যে এটি প্রায় তিন দশকের মধ্যে তাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ। তারা বলেন, প্রতিবার গোলাবর্ষণ শুরু হলেই আমরা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি -উরির বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী আত্তা মোহাম্মদ বলেছেন নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার শওকত নন্দার নিকট। আত্তা মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘উভয় দেশই পারমাণবিক যুদ্ধে নেমে আমাদের সবাইকে হত্যা করাই ভালো, এতে অন্তত আমাদের এই দুর্ভোগ থেকে চিরমুক্তি মিলবে।’
যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রতি মূহুর্তে বিস্তৃত হচ্ছে, উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দেশ দুটির মধ্যে সংঘাত যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, এবং এর প্রভাব সীমান্তের বাইরেও বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে, তখন ১৯৭১ সালের পর এটিই সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ সময় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা। এভাবে চলতে থাকলে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য, উপরন্তু নিজ নিজ দেশের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, প্রতিপক্ষের নিকট পরাজয় মেনে না নেওয়ার অজুহাতে কোনোএক সময় দেশদুটি যুদ্ধে তাদের সমরাস্ত্র ভান্ডারে থাকা পারমাণবিক সমরাস্ত্র ব্যবহারের দিকে ধাবিত হতে পারে, যা গোটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য চরম বিপর্যয় ঢেকে আনতে পারে। তাই সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমন্ত বোস।
সংযম ও উত্তেজেনা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বব্যাপী আহবানের কথা উল্লেখ করে, দক্ষিণ এশিয়ায় জাতীয়তাবাদ এবং সংঘাতের ছেদ সম্পর্কে মনোনিবেশকারী সুমন্ত বোস বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, উত্তেজনা কমানোর কার্যকর কূটনৈতিক প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে।’
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের ডনথি বলেন, মধ্যস্থতা কঠিন হবে, কারণ ‘উভয়পক্ষই অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে ঝুঁকি নেওয়ার জন্য বেশি আগ্রহী’। তিনি আরও বলেন যে, তারা ইতিমধ্যেই উন্নতির সিড়ির উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য, সকল বন্ধুপ্রতিম শক্তির সমন্বিত এবং টেকসই আন্তর্জাতিক চাপের প্রয়োজন হবে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মীথ মনে করেন দেশ দুটির মধ্যে চলমান যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এটি অসম্ভব। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান সতর্ক করে বলেছেন যে দেশ দুটির চলমান যুদ্ধ ও সংঘাত নিয়ে, ‘বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার শত্রুতার মতোই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ ‘দুটিই ভিন্ন কারণে বিপজ্জনক।’ আসলে দেশ দুটি একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং এ অবস্থায় ভূল ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার ও তথ্য বিনিময় করে দেশ দুটিকে সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা হবে দুটি দেশের মধ্যে প্রথম পারমাণবিক যুদ্ধ। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার গোটা অঞ্চল এবং এমনকি বিশ্ববাসীকেও বিপজ্জনক পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ভালো দিক হলো, বড় ধরণের কোনো বিপর্যয়ের আগেই পশ্চিমা দেশগুলোর হস্তক্ষেপে পাকিস্তান ও ভারতের যুদ্ধ সাময়িক বিরতিতে একমত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, পুরোপুরি যুদ্ধের আশঙ্কা এবং উদ্বেগ দূর করার জন্য দেশ দুটির মধ্যেকার সংকটের মুল কারণগুলো দূর করা অপরিহার্য।
মনে রাখা দরকার যে, যুদ্ধের সাময়িক বিরতি, আর যুদ্ধের স্হায়ী সমাধান আলাদা বিষয়। যুদ্ধ বিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও বিভিন্ন স্হাপনায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হচ্ছে। দেশ দুটির মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ও শত্রুতা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি, এই দ্বন্দ্ব জন্মগত। জন্মের দ্বন্দ্ব অপসারণ করেই কেবল স্থায়ী সমাধান সম্ভব। ১৯৪৭ এর পর থেকে বারবার সশস্ত্র সংঘাতে-যুদ্ধে জড়িত হয়েছে দেশ দুটি, দুটি দেশ অস্ত্র নির্মাণ, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও মজুদকরণের প্রতিযোগিতায়ও দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছে, ফলে বিভিন্ন মানব বিপর্যয়কারী আধুনিক সমরাস্ত্রসহ সভ্যতা ধ্বংসকারী পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র পর্যন্ত তৈরি করে নিজেদের অস্ত্রাগার পরিপূর্ণ করে রেখেছে। পারমাণবিক সমরাস্ত্র মজুদকরণে দেশ দুটির অবস্থা প্রায় সমানে সমান। কাজেই পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা।
পাক-ভারতের মধ্যেকার জন্মগত স্থায়ী শত্রুতা এবং ফিবছর যুদ্ধের হুমকি, সীমান্ত সংঘাত, গোলাগুলি বিনিময় ইত্যাদি কারণে দেশ দুটির মধ্যে চলমান অস্থির পটভূমির প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান রাউটলেজ থেকে ২০১৯ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলো, সেই গবেষণাপত্রের বিষয়টি ২০২৫ সালে আবারও প্রাসঙ্গিক আলোচনায় এসেছে। কারণ ২০১৯ সালের সেই গবেষণাপত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিলো যে ২০২৫ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ-সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এই ২০২৫ সালেই দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে বিধায় পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা সত্যি সত্যি সংঘটিত হতে পারে, ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্যে পরিণত হতে পারে বলে সচেতন জনগোষ্ঠী আশংকিত হওয়ার কারনেই ২০১৫ সালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন হয়েছেন।
পারমাণবিক যুদ্ধ সংঘটিত হলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানী ঘটবে, বেশুমার মানুষ আহত হতে পারে, মানুষের অসংখ্য বাসস্থান, ঘরবাড়ি ইত্যাদি ধ্বংস হবে, অনাহার-অর্ধাহারে মানুষের জীবন হবে বিপদাপন্ন হবে, সমগ্র পাকিস্তান ও ভারত এবং এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোও পুরোপুরি বা আংশিক জনমানবহীন অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই গবেষণাপত্রে। এর প্রভাব হবে বিশাল ধ্বংসাত্মক এবং পরিধির দিক থেকে পুরো এশিয়া, এমনকি গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে গবেষণাপত্রের উপসংহারে।
গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, এক ভয়াবহ শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়ায় বর্ণনা করে বলা হয়, ‘ক্রোধ, আতংক, ভূল বোঝাবুঝি, ভূল যোগাযোগ এবং উভয়পক্ষের কঠোর প্রটোকলের ফলে পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে।’ কাজেই সাময়িক যুদ্ধ বিরতির কারণে যুদ্ধের আশঙ্কা একদম দূর হওয়ার নয়, সংকটের স্হায়ী সমাধান করা অপরিহার্য। সূত্র :
নিউইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট।
লেখক : আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।