সিলেটে বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনীতে সালাহউদ্দিন
নম্রভাবে কথা বলাকে দুর্বলতা ভাববেন না
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৫, ১:২৫:১৪ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, নম্রভাবে কথা বলাকে দুর্বলতা ভাববেন না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, “আমরা কথা বললে এ সরকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়, আর নির্বাচনের কথা বললে আরও বেশি অস্বস্তি প্রকাশ করে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করুন। আমাদের বক্তব্য উপেক্ষা করা হলে তার পরিণাম শুভ হবে না।”
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ্ব জি.কে. গউছ। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন আহমদ মিলন ও মিফতাহ্ সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম. এ. মালিক, বিএনপির সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার, সাবেক সংসদ সদস্য এম. নাসের রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম. কয়সর আহমেদ, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন এবং হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, “উপদেষ্টারা যেভাবে অগণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলছেন এবং যেসব সমস্যার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, আমরা সেগুলোর তথ্য দিয়েছি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আদালতের রায়ে নির্বাচিত মেয়র ইশরাক হোসেনকে এখনো শপথ নিতে দেওয়া হয়নি। আইন ও গেজেটকে তোয়াক্কা না করে শাসন কেমন চলছে, তা আমরা দেখছি। এতে মনে হয় আমরা যেন কোনো দাসখত দিয়ে দিয়েছি, আপনি যা বলবেন সেটাই পালন করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, শপথের ব্যবস্থা করুন, অন্যথায় আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়বে।”
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “বিএনপি দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রহরী হিসেবে কাজ করবে। যদি বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন না করত, তবে আজ গণতন্ত্র মুক্ত হতো না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে জনগণ সচেতন। বেগম খালেদা জিয়া মানেই বাংলাদেশ, আর নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিএনপি সুশাসনের বাংলাদেশ গড়বে এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবে। যেসব ব্যক্তি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করেন না, তাদের সদস্যপদ দেওয়া উচিত নয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ডিএনএ-তে গণতন্ত্র নেই। তারা ৫ আগস্টে জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের দায়ে বিতাড়িত হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদ কখনো স্থায়ী হয় না। তাদের পতন অত্যন্ত নির্মমভাবে ঘটে-এটা ইতিহাস প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগের যারা অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিচার হবেই। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে গণহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্মম হত্যার বিচার একদিন হবেই।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, “তারেক রহমান নিজ হাতে ২০ টাকা জমা দিয়ে সদস্য ফরম পূরণের উদ্বোধন করেছিলেন। এটি দলীয় দৃষ্টিকোণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের এখন সর্বস্তরে সদস্য সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যেখানেই আগ্রহী ব্যক্তি পাওয়া যাবে, তাদের কাছে ফরম পৌঁছে দিয়ে আন্তরিকভাবে পূরণ করাতে হবে। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া। কারণ তাদের রাজনৈতিক ডিএনএ-তে সমস্যা রয়েছে। বাকি যারা শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী, ভালো ও সজ্জন, তাদেরই সদস্য করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী এনামুল হক, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবদুল হক, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুর রহিম রিপন ও সৈয়দ আশরাফুন্নবীসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন সিলেট জেলা উলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নুরুল হক।