দেশে প্রথমবারের মতো মুরগির আইবিএইচ রোগের জন্য দায়ী দুই সেরোটাইপ শনাক্ত করলেন সিকৃবি ভিসি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৫, ১:১৯:২০ অপরাহ্ন

এস এম রায়হানুল নবী, সিকৃবি প্রতিনিধি : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য ড. মো. আলিমুল ইসলাম এবং তাঁর গবেষক দল দেশে প্রথমবারের মতো ব্রয়লারের দেহে ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস (আইবিএইচ) রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী ফাউল অ্যাডেনোভাইরাসের দুটি সেরোটাইপ (৮বি এবং ১১) শনাক্ত করেছেন ।
বাস-ইউএসডিএ’র অর্থায়নে পরিচালিত ওই গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম। ওই গবেষণায় কো-পিআই হিসেবে আছেন বাকৃবির একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম এবং বাকৃবির স্নাতকোত্তরের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। গবেষণাটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের দিকে বাংলাদেশে হঠাৎ করে কমবয়সী (৩-৬ সপ্তাহ বয়সী) ব্রয়লার মুরগির ব্যাপক মৃত্যু হয়, খামারিরা এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরবর্তীতে বড় বড় বাণিজ্যিক ব্রয়লারের খামারিরা মুরগি নিয়ে বিভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা (হিস্টোপ্যাথোলজি ও মলিকুলার ডিটেকশন) করে দেখেন এটি বার্ড ফ্লু নয়, আবার রানীক্ষেতও নয় বরং এটি নতুন একটি ভাইরাস। ব্রয়লারের মাংস সাধারণ মানুষের আমিষের উৎস, এটি বিবেচনা করেই রোগটির সমস্যার সমাধানে এই গবেষণা। গবেষণাটি সম্প্রতি প্রবন্ধ আকারে ফ্রন্টিয়ারস ইন মাক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ভাইরাসটি সম্পর্কে ড. আলিমুল ইসলাম বলেন, ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস (আইবিএইচ) নতুন একটি উদীয়মান রোগ, যা ফাউল অ্যাডেনোভাইরাসের আক্রমণের কারণে হয়। ভাইরাসটির ১১টি সেরোটাইপ রয়েছে এবং পাঁচটি জেনোটাইপ রয়েছে। সেরোটাইপ ৮বি এবং ১১ সবচেয়ে মারাত্মক। রোগটি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে বাণিজ্যিক ব্রয়লারকে এবং লেয়ারেও আক্রমণ করতে পারে।
ওই ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগির লক্ষণ সম্পর্কে অধ্যাপক জানান, অল্প বয়সী মুরগির ক্ষেত্রে বিশেষ করে ১৪ দিন বয়সী ব্রয়লার মুরগিতে রোগটি বেশি হয়ে থাকে। ১৫ দিন বয়স থেকে এদের খাবার খাওয়া, চলাচল ও বৃদ্ধি কমে যায় এবং ২১ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি লক্ষণ দেখা যায় এবং ৩-৪ সপ্তাহ বয়সের মধ্যেই মুরগিগুলো মারা যেতে থাকে। এ ভাইরাসের আক্রমণের ফলে মুরগি বড় হওয়ার আগে মারা যায় ফলে বাজারে বিক্রি করতে না পারায় খামারিরা ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন।
গবেষক জানান, পরবর্তীতে তারা আইবিএইচ-এর বিরুদ্ধে একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন তৈরি করেন এবং মুরগিতে এর ফিল্ড ট্রায়াল করে সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেয়েছেন। নতুন করে মুরগিগুলো আইবিএইচে আক্রান্ত হয়নি। তবে ভ্যাকসিনটির জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন দাবি করেন গবেষক। গবেষক আরো বলেন, এই রোগের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে কেউ বা কোনো কোম্পানি এখনো তৈরি করেনি। দুই একটা কোম্পানি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে আমদানি করে বলে তা সহজলভ্য নয়। প্রান্তিক খামারিরা এটি ব্যবহার করতে পারছেন না। ভ্যাকসিনটি যদি সরকারি উদ্যোগে বা স্থানীয় কোন প্রতিষ্ঠান দ্বারা তৈরি হয়, তাহলে খামারিদের এটি সহজপ্রাপ্য হবে। খামারিদের মুরগিগুলোর মৃত্যুর হার কমে আসবে, উৎপাদন বাড়বে, খামারির পাশাপাশি ভোক্তারাও এতে লাভবান হবেন।