স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশেও চালু হয়নি সিজারিয়ান ওটি
কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : পঞ্চাশ শয্যার কার্যক্রম চালু হয়নি তিন বছরেও
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৫, ৭:০৭:২৬ অপরাহ্ন

আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় পনেরো কোটি টাকায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল না পাওয়ায় শুরু করা যাচ্ছে না ৫০ শয্যার কার্যক্রম। এতে ছয়টি ইউনিয়নের পৌনে ২ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ২০১৯ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে ১৪ কোটি ৭০ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৪.৯২ টাকা ব্যয়ে নতুন ছয়তলা ভবন ও কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের মার্চে শেষ হয় কাজ। জুলাইয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল ভবন, চিকিৎসক ও নার্স কোয়ার্টার, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, একটি গ্যারেজ ও এক কিলোমিটার আরসিসি ঢালাই সড়ক নির্মাণ করা হয়। এরপর গত তিন বছরেও শুরু হয়নি পঞ্চাশ শয্যার কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩১ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী যে জনবল দরকার, কোম্পানীগঞ্জ হাসপাতালে তা-ও নেই। এখানে চারজন বিশেষজ্ঞসহ মোট ১২জন চিকিৎসক থাকার কথা। আছেন পাঁচজন। তারা হলেন মায়া রানী দাস (গাইনী), পলাশ চন্দ্র দে (মেডিসিন), ফাতেহা রিজওয়ানা (অ্যানেসথেসিয়া), আফসানা জাকিরা (মেডিকেল অফিসার) ও সহকারী সার্জন রাজীব হোসাইন (ডেন্টাল)।
এখানে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের (স্যাকমো) চারটি পদের বিপরীতে আছেন দুজন। তাদের একজন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেন। অপরজন পাড়ুয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সময় দেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেই জরুরি মেডিকেল অফিসার। ফার্মাসিস্ট নেই একজনও। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) শোভন কুমার মজুমদার গত জানুয়ারিতে বদলি হয়ে ঢাকা বার্ন ইউনিটে গেছেন। মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান (রেডিওগ্রাফি) বিবি হাজেরা প্রেষণে আছেন ঢাকা আইএইচটিতে।
এদিকে, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ২৮ বছরেও এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হয়নি অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। ফলে প্রসূতি অস্ত্রোপচার করাতে হয় সিলেট শহরে। গত ১৮ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওটি চালুসহ ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, প্রয়োজনীয় জনবল ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জবাবে তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাক্তার মনিসর চৌধুরী দুয়েকদিনের মধ্যে ওটি চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সাড়ে চার মাসেও সেই আশ্বাসের প্রতিফলন হয়নি।
অপরদিকে, আউট ডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী। চিকিৎসক ও লোকবল সংকটের কারণে এতো রোগীর চাপ সামাল দিতে কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের হিমশিম খেতে হয়। গত সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে অপেক্ষমাণ কয়েক শ’ রোগী। তাঁদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন পাঁচজন চিকিৎসক।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের জহির (৩৭) বলেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর তিনি ডাক্তার দেখাতে পেরেছেন। কিন্তু, টেকনোলজিস্ট না থাকায় তাঁকে বাইরে গিয়ে এক্স-রে করতে হয়েছে। দশ বছরের শিশু সন্তানকে ডাক্তার দেখাতে বেলা ১২টায় হাসপাতালে আসেন লম্বাকান্দি গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। দুপুর দেড়টার পর ডাক্তারের সাক্ষাৎ পান তিনি। জানা যায়, গত সোমবার (২ জুন) হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নেয় ৬২৭ রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) আরিফুর রহমান নয়ন বলেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকট প্রকট। স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে উপজেলার রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। এতে রোগীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। সংকট নিরসনে একধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো চিকিৎসকের পদায়ন হয়নি।
সিজারিয়ান ওটি চালু করতে না পারার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে টিএইচও বলেন, এখানে সিজারিয়ান রোগীদের ইনিশিয়াল ট্রিটমেন্ট এবং সিজার পরবর্তী ট্রিটমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। ব্লাড ট্রান্সমিশন করার সুযোগও নেই। চিকিৎসক সংকট তো আছেই। ফলে ওটি চালু করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, নতুন ভবনের নিচতলায় এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) কর্নার ও এএনসি (প্রসবসেবা) কর্নার চালু রয়েছে। দুতলায় জিন এক্সপার্ট (দ্রুত যক্ষ্মা শনাক্ত করার যন্ত্র) মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মারোগী শনাক্তের কার্যক্রম চলছে।