সোনাই নদীতে বালুখেকোদের তান্ডবে হুমকিতে রাবার ড্যাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুন ২০২৫, ৫:৪৯:৩৫ অপরাহ্ন

আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ॥ ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সোনাই নদীতে বালুখেকোদের তান্ডবে হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের ১০ কোটি টাকার রাবার ড্যাম। প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে একটি চক্র পুরো নদী থেকে বালু তুলেও ক্ষান্ত হচ্ছে না, খোদ রাবার ড্যাম এলাকায় লিস্টার মেশিন বসিয়ে অবাধে উত্তোলন করে যাচ্ছে বালু। ফলে হুমকিতে পড়েছে সেচ সুবিধার আওতায় থাকা পাঁচ হাজার কৃষকের ভরসাস্থল বৈশাকান্দি-বাহাদুরপুর রাবার ড্যাম।
স্থানীয়রা জানান, শুধু বৈশাকান্দি ও বাহাদুরপুরেই প্রতিদিন শতাধিক নৌকা বালু উত্তোলন ও পাচার করে যাচ্ছে। প্রতিটি নৌকার ধারণক্ষমতা ৮০০ থেকে ১০০০ ফুট। এই নৌকাগুলো ব্যবহার করে অবৈধ বালু বাণিজ্য পরিচালনা করছেন স্থানীয় জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম, সফিক মিয়া, রফিক মিয়া, আব্দুল করিম, চাঁন মিয়া, সাদ্দাম, নুর নবী, উবায়দুল্লাহ, সাইদ আলম, জয়নাল, আব্দুল্লাহ, নজরুল, খুরশিদ মিয়া, মিলন মিয়া, আমির আলী গংয়ের একটি সিন্ডিকেট। তাদের শেল্টার দিচ্ছেন ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেল। বালু তুলতে ফুটপ্রতি ১০ টাকা করে নেন বালু সিন্ডিকেট সদস্যরা। আর জায়গার মালিক দাবিদাররা নেন ফুটপ্রতি পাঁচ টাকা করে। এভাবে মিলেমিশে শেষ করা হচ্ছে সোনাই নদীর বালু।
সোনাই নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল জব্বার খোকন জানান, রাবার ড্যামের ফলে সোনাই নদীর পানি দিয়ে বোরো মৌসুমে স্থানীয় কৃষকরা সাতশো একর অনাবাদি ও পতিত জমিতে বোরো ও রবিশস্য চাষ করেন। কিন্তু বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে রাবার ড্যাম। গত বছর বালু উত্তোলনের কারণে ড্যামে ছিদ্র হয়ে যায়। এবারও সেই ড্যাম হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মিলে না। তাদের বিরুদ্ধে কৃষকরাও ভয়ে মুখ খোলে না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে জলপথে ছাতক যাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।
বৈশাকান্দি গ্রামের মুরব্বি আমির উদ্দিন জানান, চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেলের নেতৃত্বে রাত ২টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলন। আমরা নিষেধ দিলেও তারা মানে না। বর্তমানে নদীর দুই পাড়ের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য ময়না মিয়া বলেন, প্রশাসনকে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তারা ব্যবস্থা নেননি। শুনছি প্রশাসনকে মেইনটেইন করে বালু তোলা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী শুকুর আলী বলেন, যখন বালু লুট হয়, তখন পুলিশকে জানালে তারা আসব আসব করে। কিন্তু আসে না। প্রতিদিন শতাধিক নৌকায় বালু পাচার হচ্ছে। প্রায় তিন সপ্তাহ হয় বালু লুট হচ্ছে। গত ঈদের আগেও এক সপ্তাহ বালু লুট হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
এ ব্যাপারে বাহাদুরপুর গ্রামের রফিক মিয়া বলেন, ‘বালু উত্তোলনের সাথে আমি এবং মাওলানা রফিকুল ইসলাম জড়িত নই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিপক্ষে আমার অবস্থান। গত শনিবার নৌকা উঠতে চাইছিলো, বাধা দিয়েছি। আমি সব সময়ই প্রতিবাদ করি। কিন্তু কেন জানি আমার নামটা বারবার উঠে আসে।’
তাহলে কারা বালু তুলছে- এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক মিয়া বলেন, ‘সুফি আলম সুহেল চেয়ারম্যানের লোকেরাই বালু তুলছে। অন্য কেউ না।’
অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এলাকাটি দুই উপজেলায় পড়েছে। দুই উপজেলার সীমানা নিয়ে একটা জটিলতাও আছে। অন্য উপজেলায় গিয়ে তো আর অভিযান দিতে পারি না। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে স্থানীয়রা। তবে, দুই উপজেলার এসিল্যান্ড সমন্বয় করে অভিযান দিতে পারলে ভালো হতো। আমি বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।