সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের ইন্তেকাল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৩:২০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট নগরীর ৩৯নং ওয়ার্ডের শাহপুর তালুকদারপাড়া নিবাসী উত্তর সুরমার ঐতিহ্যবাহী শাহ্ খুররম ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় সিলেট নগরীর নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, একমাত্র পূত্র, দুু’ কন্যা, ভাইবোন, ভাতিজা-ভাতিজি, আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী, বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এবং দেশে-বিদেশে অসংখ্য সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব রেখে গেছেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মরহুমের নামাজে জানাজা আজ রোববার বাদ জোহর দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ্) মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। পরে দরগাহ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। গতকাল শনিবার অধ্যক্ষ মো: সিরাজুল ইসলামের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ ওয়াজিদ) ১৮ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে সিলেট সদর উপজেলার তৎকালীন ৬নং টুকেরবাজার ইউনিয়নের তালুকদারপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দি এইডেড হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন সিলেট সরকারি এম.সি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে যা বর্তমানে সিলেট সরকারি কলেজ। এ কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে ১৯৮১ সালে (১৯৭৮ সালের ব্যাচ) অনার্স ও ১৯৮৩ সালে (১৯৭৯ সালের ব্যাচে) কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি একজন তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন।
সিরাজুল ইসলাম নাটকে ও অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত নাটক হলো কল্যাণ মিত্র বিরচিত, ‘সাগর সেঁচা মানিক’। এ নাটকে তিনি অভিনয় করেন নিজাম পাটনির চরিত্রে। ‘জয়-পরাজয়’ নাটকে ভূট্টো চরিত্রে এবং ‘একে শূন্য দশ’ নাটকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৮৪ সালে তিনি সৌদি আরব গমন করেন। সেখানে ২৩ মাস অবস্থান করে ১৯৮৫ সালের শেষ দিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে লিখেন, ‘মরু প্রবাসীর জবানবন্দি’ নামক ভ্রমণ বৃত্তান্তমূলক উপন্যাস। যা’ ১৯৯০ গ্রন্থাকারে সালে প্রকাশিত হয়।
অর্থনীতির ছাত্র হলেও ছোটবেলা থেকে তাঁর সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল প্রবল। তিনি সাপ্তাহিক যুগভেরী, সাপ্তাহিক সিলেট সমাচার, দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক এশিয়া, সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা সহ অসংখ্য পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লেখালেখি করেছেন। তাঁর প্রকাশিতব্য গ্রন্থ হচ্ছে আক্রোশ (উপন্যাস), ‘মা’ নাট্যগ্রন্থ ১৯৯৩ সালে প্রয়াত লুৎফুর রহমান সম্পাদিত দৈনিক বৃহত্তর সিলেটের মানচিত্র পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়। কাব্যগ্রন্থ প্রকৃতি কন্যা, আপন দর্পণ (জীবনী), ‘শাহ খুররম কলেজ ও আমার জীবন’ এবং ছোটগল্প ‘অতঃপর’ প্রভৃতি।
মাস্টার্সে অধ্যয়নকালীন আঠারোজন সহপাঠী নিয়ে ভারতে শিক্ষা সফরে যান। ভারত সফর করে ফিরে এসে লিখেন, ‘ভারতের পথে পথে’ নামক ভ্রমণকাহিনী। এ গ্রন্থটি মুহম্মদ ফয়জুর রহমান সম্পাদিত দৈনিক সিলেটের ডাক-এ ১৯৮৭ সালে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে সিরাজুল ইসলাম বিশ্বনাথ কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এখানে অধ্যাপনায় নিয়োজিত থাকাকালে তাঁর এলাকায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা জাগে।
১৯৯৩ সালে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সংগঠিত করে প্রতিষ্ঠা করেন শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজ। এ জন্যে তাঁকে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। দীর্ঘ পঁচিশ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর অবসর গ্রহণ করেন তিনি।




