বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জগন্নাথপুরের ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৬:৫৭ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনপ্রতিনিধি শূন্য হয়ে পড়ে দেশ। জনপ্রতিনিধিদের পদে সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেকে মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি এই ৫ পদের ক্ষমতাসীন দাবি করে উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ঘুষ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলাবাসীর পক্ষে এ বিষয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের নিকট গত বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে এ অভিযোগ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগের কপি সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সিলেটের দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৪ নভেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগেরসহ সভাপতির ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বরকত উল্লাহ। তিনি এ উপজেলায় যোগদান করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি পদের দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচিত কোন সরকার না থাকায় নিজেকে মন্ত্রী, এমপি পদের দায়িত্বশীল দাবি করে উপজেলার সকল দপ্তরের প্রকল্প থেকে মন্ত্রী,এমপি,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি এই ৫ পদের ৫ ভাগ টাকা ঘুষ আদায় করেন। উপজেলা পরিষদ ভবনে ইউএনওর জন্য নির্ধারিত কক্ষে না বসে মনমতো সরকারি অর্থ খরচ করে রাজকীয় অফিসকক্ষ তৈরি করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষ দখল করে নিজে অফিস করেছেন।
এছাড়াও সরকারি সকল প্রকল্প থেকে ৩০ শতাংশ টাকা ঘুষ নেন তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ, নদী ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প ও কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনে মোটা অংকের উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ করা হয়। উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কার্যালয়ের কয়েক কোটি টাকা প্রকল্প থেকে ৩০ শতাংশ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আশারকান্দি ইউনিয়নের একটি প্রকল্পের ১০.৭০০ টন চালের বরাদ্দ কাজ না করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার কথা অভিযোগে উল্লেখ করা হয় । উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল এডিপির টাকা প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে তছরুপ ও একটি প্রকল্পে একাধিক খাত থেকে প্রকল্প সৃজনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি উপজেলার খাদ্য বান্ধব ডিলার নিয়োগে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী উপজেলার দিঘলবাক এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমীন খানের নিকট থেকে দুই লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়েও ডিলার না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন তিনি। উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের দিঘলবাক গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমীন খান গতকাল সোমবার সিলেটের ডাককে বলেন, গত এক বছরে ইউএনও বরকত উল্লাহ এ উপজেলায় রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার ঘুষ দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহারে উপজেলাবাসী অতীষ্ঠ। তিনি নিজেকে ক্ষমতাসীন কর্মকর্তা দাবি করে অশালীন আচরণ করেন। উপজেলাবাসীকে তার দুর্নীতির কবল থেকে বাঁচাতে সুষ্ঠু তদন্তক্রমে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অভিযোগ করেছি। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বরকত উল্লাহকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। অফিসে গিয়ে জানা গেছে তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ দৈনিক সিলেটের ডাককে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।




