ওসমান হাদীর মৃত্যুতে সিলেট জুড়ে বিক্ষোভ, হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার দাবি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১:২২:০১ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদী হত্যার প্রতিবাদে সিলেট জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে সিলেট নগরী থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত। জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদ থেকে ছাত্র-জনতার খন্ড খন্ড মিছিল মিলিত হয়ে সড়কে ঢল নামে সর্বস্তরের জনতার। সিলেটের বিভিন্ন মসজিদ থেকে ছাত্র-জনতার মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কোর্ট পয়েন্টে সভায় মিলিত হয়।
ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির নেতার ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্র-জনতা। তারা হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। অন্যথায় অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা হারাবে।
তারা বলেন, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হাদির হত্যাকান্ড নৃশংস, ন্যক্কারজনক ও জঘন্য অপরাধ। হত্যাকারীরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে থাকলে ভারতকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। না হলে ভারতের সাথে সব ধরনের সম্পর্ক পুনঃ বিবেচনা করতে হবে। তারা বলেন, কোন ষড়যন্ত্রকারী পার পাবে না। যারা এই হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে এবং যারা এ দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছাত্র-জনতা তাদেরকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। সাধারণ ছাত্র-জনতা ছাড়াও ইনকিলাব মঞ্চ, এনসিপি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র জমিয়ত, গণঅধিকার পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
বাদ জুম্মা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শরীফ উসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ, ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও পতিত ফ্যাসিস্টের অরাজকতা প্রতিরোধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ইনকিলাব মঞ্চ। এতে এনসিপি, ছাত্রশিবির ও ছাত্রজমিয়তের নেতারা বক্তব্য দেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের পদত্যাগ দাবি করেন। হবিগঞ্জে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং আ’লীগের অফিসে ভাঙচুর করে।
এদিকে, শুক্রবার সকাল থেকে সিলেটে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয় ও ভিসা আবেদনকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নগরীর উপশহরে অবস্থিত সহকারী কমিশনারের কার্যালয় ও সোবহানীঘাট এলাকার ভিসা আবেদন কেন্দ্র ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বন্দরবাজার ও শহীদ মিনার এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অবস্থানও লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন সমাবেশ শেষে শহীদ ওসমান হাদীর মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অপরদিকে, সিলেটে শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর গায়েবানা জানাজা আজ শনিবার বাদ জোহর কোর্ট পয়েন্টের কালেক্টরেট মসজিদের সম্মুখে আয়োজন করেছে জুলাই যোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা। গায়েবানা জানাজার নামাজে দল-মত-নির্বিশেষে, সকল শ্রেণি-পেশার সবাইকে শরীক হবার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আধিপত্যবাদবিরোধী বিপ্লবী জুলাইযোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদীকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর শাখা । বাদ জুমা বন্দরবাজার কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদের সভাপতিত্বে এবং মহানগর সেক্রেটারি শহীদুল ইসলাম সাজু’র সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরের সাবেক সভাপতি সিদ্দিক আহমদ। সমাবেশে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ফেঞ্চুগঞ্জ(সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ফেঞ্চুগঞ্জে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুমার নামাজের পর ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের থানার রোড পয়েন্ট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে পশ্চিম বাজার সামাদ প্লাজার সম্মুখে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন- সিলেট-৩ আসনে এনসিপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, তানিম আহমদ, শাহিন আহমদ ও রাব্বি হাসান শিশির।
এদিকে, শহীদ ওসমান হাদীর হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে বিয়ানীবাজার ও
গোলাপগঞ্জে ছাত্র জমিয়ত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ছাত্রজমিয়ত বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলা কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মধ্যবাজারে এসে সংক্ষিপ্ত পথসভায় মিলিত হয়। পথসভায় বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্র জমিয়তের সভাপতি আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিয়ানীবাজার উপজেলা জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা ফরহাদ আহমদ ও পৌর জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আব্দুল্লাহ। বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, উপজেলা যুব জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আহমদ শাহীনসহ উপজেলা ছাত্র জমিয়তের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী। পথসভা শেষে শহীদ ওসমান হাদির মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন উপজেলা জমিয়তের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শরীফুল হাসান।
গোলাপগঞ্জ ছাত্র জমিয়তের বিক্ষোভ মিছিল বাদ জুমা চৌমুহনী পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আহমদ খান রোড পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের শুরুতে উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্রজনতার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে উপজেলা ছাত্রজমিয়তকে স্বাগত জানানো হয়। ছাত্র জমিয়ত সম্মিলিতভাবে মিছিলে অংশগ্রহণ করে। বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা জমিয়তের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফয়সল আহমদ, জমিয়ত নেতা মাওলানা আসাদুল হাবিব এবং ছাত্রনেতা শেখ আব্দুল্লাহ উসামা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক জমিয়ত সিলেট জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদির জাকির, গোলাপগঞ্জ পৌর যুবজমিয়তের সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতি রুহুল কুদ্দুস, উপজেলা ছাত্র জমিয়তের সভাপতি আবু সালেহ উসমান, সহ-সভাপতি নাঈম আহমদ ও আহমদ মাজিদ, সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমদ জায়েদ, প্রচার সম্পাদক শামসুল হুদা মামুনসহ ছাত্র জমিয়তের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
হবিগঞ্জে জুম্মার নামাজের পর শহরের কোর্টমসজিদ প্রাঙ্গণে ব্লকেড ও কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচির ডাক দেয় হবিগঞ্জের ছাত্র-জনতা। জুুম্মার নামাজের পর থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে কোর্টমসজিদের সামনে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে ব্লক করে দেয় বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতা। পরে দাহ করা হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা। কুশপুত্তলিকা দাহ শেষে শহরে বের করা হয় এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালায়।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মাধবপুর উপজেলায় আধিপত্যবাদবিরোধী বিপ্লবী জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান হাদী হত্যার প্রতিবাদে কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় আজাদী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। জুম্মার নামাজের পর মাধবপুর উপজেলা পরিষদ গেট থেকে কর্মসূচির সূচনা হয়। প্রথমে শহীদ ওসমান হাদীর স্মরণে একটি প্রতীকী কফিন মিছিল বের করা হয়। পরে সেটি বিক্ষোভ মিছিলে রূপ নেয়। মিছিলটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নেয়। এতে প্রায় ৩০ মিনিট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে মাধবপুর উপজেলা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শহীদ ওসমান হাদীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।



