খুন হওয়ার দেড়মাস পর দেশে আলীর লাশ
শোকের পাথর বুকে চেপে বাবার কাঁধে ফ্রান্স ফেরত ছেলের লাশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ৪:৪৬:১৫ অপরাহ্ন
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : ফ্রান্সে খুন হওয়ার দেড়মাস পর বড়লেখার কাওছার হামিদ আলীর (৩৫) লাশ দেশে এসে পৌঁছেছে। গতকাল সোমবার ভোরে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইটে আলীর লাশ এসে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে একমাত্র ছেলের কফিনবন্দি লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলীর বাবা আবুল হোসেন। সকাল আটটায় শোকে পাথর বুকে চেপে ছেলের কফিনবন্দি লাশ নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেন তিনি। ফ্রান্সে আইনী প্রক্রিয়া শেষে গত ২ ডিসেম্বর তার লাশ বিমানে দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।
সন্ধ্যায় লাশ বাড়িতে পৌঁছার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আলীর মা-বাবা ও স্বজনেরা। যে ছেলেকে একদিন কোলেপিঠে বড় করেছেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলেন-সেই ছেলে কফিনে বন্দী হয়ে দেশে ফিরবে তা হয়তো কখনো ভাবেননি মা-বাবা। লাশ বাড়ি এসে পৌঁছুলে আলীকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। আলী বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে।
গতকাল সোমবার বাদ মাগরিব বড়লেখার কোর্ট চত্বর এলাকায় জানাজা শেষে আলীর লাশ গ্রামের (পুরোনো) বাড়ি বিয়ানীবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় ১২ বছর আগে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন কাওছার হামিদ আলী। সেখান থেকে প্রায় সাত বছর পর আলী পাড়ি জমান ফ্রান্সে। এরমধ্যে আলীর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক কাওছার হামিদ আলীকে ঘাড়ে আঘাত করে এবং ধাক্কা দিয়ে সড়কের উপর ফেল দেয়। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২৩ দিন তিনি কোমাতে ছিলেন। এরপর ১৩ অক্টোবর মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। শুরুতেই আলীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। পরে তাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে।
এদিকে, আলীকে হত্যায় জড়িতদের ধরতে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে প্রবাসী একটি সূত্র জানিয়েছে। স্বজন ও প্রবাসীরা আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ জানিয়েছেন, আলীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।