জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৩২:৩৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আজ ১০ জানুয়ারি। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতীক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নটি যখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি-তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বাঙালির অবিসংবাদিু নেুা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুযন্ত্রণা শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে লন্ডন-দিল্লী হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন তিনি। এক সাগর রক্ত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেই দেশে বঙ্গবন্ধুর ফেরার দিনটি ছিল অনন্য এক দিন। সেদিন নতুন এদেশের সব রাস্তা গিয়ে মিলেছিল তৎকালীন তেজগাঁওয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছিল তার আগমনের পথ। বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর পর্যন্ত ছিল মানুষের ঢল। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’-এসব স্লোগানে সেদিন আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়। যে দেশ, যে স্বাধীনুার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে যারা গিয়েছিলেন, অস্থায়ী সরকারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা তারাও অশ্রুসজল নয়নে বরণ করেন ইতিহাসের এই বরপুত্রকে। জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন। ১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রীসভা, প্রধান নেুৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেুৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এখন ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন তার খুনিদের পদচারণা থেকে মুক্ত। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যারা এ দেশের স্বাধীনুার বিরোধিতা করে পাক সেনাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল,সেই সব মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী অনেকের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন স্মরণীয় এ দিবসটি পালনের জন্য নানা আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ আগমনের ঐতিহাসিক সময়ে সেদিন বিশেষ বিমানে ঢাকার পথে বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন ভারতীয় কূটনীতিক বেদ মারওয়া। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মনের অবস্থার কথা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে বেশ চাঙ্গা দেখাচ্ছিল। সবকিছুতেই তার মধ্যে প্রচন্ড উৎসাহ কাজ করছিল। আর ঢাকা বিমানবন্দরে তখন অপেক্ষার প্রহর কাটছিল না এদেশের মানুষের। পরাধীনুার শৃংখল ভেঙে বেরিয়ে আসা মুক্ত স্বাধীন বাংলার মানুষ তাদের মধ্যে প্রিয় নেুাকে পেয়ে আবেগে, আনন্দে উদ্বেলিত। খুশির বন্যা বয়ে যায় সারা দেশে।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ সংবাদ পরিবেশন ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বেসরকারি এফএম রেডিও ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো আয়োজন করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার।
মহানগর আওয়ামী লীগ
ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, আজ বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মুখে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সকাল সাড়ে ১১টায় তালতলাস্থ গুলশান সেন্টারে আলোচনা সভা।
কর্মসূচীতে মহানগর আওয়ামী লীগ এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সকল নেুৃবৃন্দকে উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন।