প্রবাসে বাংলাদেশীর মৃত্যু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:০০:৪০ অপরাহ্ন
প্রবাসে বাংলাদেশী কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে তিন হাজার ২২২ জন প্রবাসী বাংলাদেশীর লাশ দেশে এসেছে। এ ছাড়া গত ৩০ বছরে বিদেশে ৪৬ হাজার ৫০৩ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৪২২ জনের বয়স ১৯ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রতিকূল পরিবেশ, অমানুষিক পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কথা বলা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী অবস্থান করছে। এই সংখ্যা এক কোটির বেশি বলে জানা যায়। এই প্রবাসিরা বৈদেশিক মূদ্রা পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। কিন্তু অনেক সময়ই প্রবাসিদের কষ্টের কথা জানা হয় না। নানা কারণে প্রবাসিরা নির্যাতন নিপীড়ন, এমন কি মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়; যদিও লাশের সঙ্গে আসা প্রতিবেদনে ‘স্মাভাবিক মৃত্যু’ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এক হাজার ৭৪৫ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে এসেছে। তাদের ২০ দশমিক ১২ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে অপঘাতে। যেসব মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলা হচ্ছে, সেগুলোও সন্দেহমুক্ত নয়। গবেষকদের মতে, প্রবাসে মারা যাওয়া শ্রমিকদের বড় একটি অংশের মৃত্যু ঘটে স্ট্রোকে। এরপর রয়েছে হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যা। আছে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, আগুনে পুড়ে মৃত্যু, আত্মহত্যা বা খুনের ঘটনাও। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, বিদেশ থেকে লাশ আসার পর আত্মীয় স্বজন মৃত্যুর কারণ খুঁজেন না। বিদেশে চাকরিতে যান সাধারণত ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। তারা দিনে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য হন। অনেকে কর্মক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা পায় না। বিভিন্ন সময়ের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে কারণগুলো ঘুরেফিরে প্রায় একই রকম। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ঘটছে সবচেয়ে বেশি অমানবিক ঘটনা। চলতি বছরের ১১ মাসে মৃত অভিবাসীদের মধ্যে ১০৩ জন নারী। নিয়োগকর্তারা তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যা উল্লেখ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- বাসা-বাড়ির মালিকদের শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতনসহ নানা কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
প্রবাসি কর্মীদের সার্বিক দেখভাল করার দায়িত্ব সরকারের। বিদেশে কেউ অমানবিকতার শিকার হলে, তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আর এব্যাপারে ভূমিকা রয়েছ সরকারের। অনেক সময় ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে বাঁচতে বিদেশের নিয়োগকর্তা দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিক মৃত্যু দাবি করে লাশ পাঠিয়ে দেয় দেশে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে- বিদেশে বাংলাদেশির অস্বাভাবিক মৃত্যু কমাতে বিভিন্নভাবে কাউন্সিলিং করার পাশাপাশি মৃত্যুর পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করা।