সিলেট মহানগর বিএনপির সম্মেলনে মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বর্তমান সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার দেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে। তাদের একটাও ভালো কাজ নেই। তাদের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিলেট মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকির সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেগুলো করেছে, এর মধ্যে ১৯৭২ সালের যে সংবিধান এদেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে বারবার কাটাছেঁড়া করে একটি অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে।
তিনি আরও বলেন, যারা যুদ্ধ করেছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারা এই সংবিধান দেখতে চাননি। ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যবস্থা, ১৯৭৫ সালে তা বন্ধ করে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।
সরকারের উন্নয়ন সম্পর্কিত বক্তব্য প্রসঙ্গে মীর্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা জোরে জোরে বলেন, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছেন। সেই উন্নয়ন কেবল গুটিকয়েক মানুষের জন্যে। ঢাকায় তারা পাতাল রেল, মেট্রোরেল করেছে। কত টাকা খরচ করেছে? যা খরচ হওয়ার কথা, তার ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি খরচ হয়েছে। পদ্মা সেতু করে বাহবা নেয়, আমাদের সময়ে সেই পদ্মা সেতুর ১০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। সেই সেতুর বাজেট ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে রোগীরা ঠিকমত শয্যা পান না, ওষুধ পান না, ডাক্তার পান না। হাসপাতালগুলোতে ঢোকার কোনো পরিবেশ থাকে না। ফলে স্বাস্থ্য সেবার জন্য বেশিরভাগ মানুষকে দেশের বাইরে চলে যেতে হচ্ছে। দেশে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, দেশে আজ ভয়াবহ নির্যাতন নিপীড়ন চলছে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। গত আগস্ট থেকে ১৭ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন। জীবিত সকল নেতাকর্মী মামলার আসামি। তিনি আরো বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির হয়েছে। বিদ্যুৎ সেক্টরে লুট হচ্ছে। আদানির সাথে চুক্তিতে দেড়লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হবে। চুক্তির ফলে বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ হবে। তিনি বলেন, ৭০ টাকা মোটা চাল, মিহি চাল ১৭০ টাকা, ডিমের দাম ৩/৪ গুণ বেড়েছে। জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। অথচ সরকার মুখে বাগাড়ম্বর করছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী ও সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এম এ জাহিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদির লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।