মৌসুমী ঝড় বৃষ্টিতেই সিলেট জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২৩, ৭:১৬:১৫ অপরাহ্ন
রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও শঙ্কিত গ্রাহকরা
আনাস হাবিব কলিন্স
মৌসুমী ঝড় বৃষ্টির শুরুতেই সিলেট জুড়ে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহপ্রাপ্তিতে শঙ্কিত গ্রাহকরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত দুই মাসের ব্যবধানে বিদ্যুতের দাম তিন দফা বাড়ানো হলেও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না। অবশ্য, বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, রমজানকে সামনে রেখে গাছ-পালা কর্তনসহ সবকটি উপকেন্দ্র মেরামত করা হয়েছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় দেখা না দিলে সিলেট জুড়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলেও দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, একটু বাতাস কিংবা বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায় না। আবার সংযোগ দিলেও কিছুক্ষণ পর পর ফের বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। শহরের চেয়ে গ্রামে এ সংকট প্রকট বলেও জানান তারা। নগরীসহ আশপাশ এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানিয়েছেন, গাছপালা কর্তন ও জরুরি মেরামতসহ নানা ‘অজুহাতে’ সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রায় সপ্তাতেই দিনভর বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রাখছে। এতে গ্রাহকদের পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে মাইকিং ও পত্রপত্রিকার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও অধিকাংশ গ্রাহকের বিষয়টি নজরে না আসায় তাদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির সিলেটের ডাককে জানান, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ (আরইবি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মিলিয়ে সিলেট বিভাগে প্রায় ২২ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ৬৬০ মেগাওয়াট। রমজানে এই চাহিদা দাঁড়াবে ৭০০ মেগাওয়াটের মতো। সে অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। বিশেষ করে মাতার বাড়ি, পায়রাসহ নতুন চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ায় সিলেট এবং বরিশাল বিভাগে
বিদ্যুতের কোন ঘাটতি হবে না বলে জানান তিনি। সিলেটের ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট তাদের পিছু ছাড়ছে না। দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট তাদের নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো জাতীয় গ্রিডে উৎপাদন কম হওয়ায় আবার কখনও গ্রিডে আগুন লেগে কিংবা পাহাড়ি ঢলে উপকেন্দ্র ডুবে যাওয়াসহ খোঁড়া অজুহাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এতে সিলেটের ব্যবসায়ীরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার একজন গ্রাহক জানান, বার বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে গতকাল সোমবার ব্যাংকে জমা টাকা দিতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। ফলে, দাপ্তরিক কাজে বেগ পেতে হচ্ছে ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষকে। সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা গেছে, রমজানকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে আজ-কালের মধ্যেই তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবেন। নগরীর কাজীটুলার বাসিন্দা রুহেল আহমদ জানান, গত বছর রমজান মাস শুরুর আগে বিউবো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে দফায় দফায় মেরামত ও সংস্কার কাজ করে। কিন্তÍু সে বছরের ২৯ এপ্রিল ঝড়বৃষ্টি ছাড়াই হঠাৎ করে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। নিম্নমানের এমন মেরামত ও সংস্কার কাজ না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, রমজানকে সামনে রেখে গ্রাহকদের স্বার্থে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুমারগাঁও গ্রিড থেকে আম্বরখানা ৩৩ কেভি উপকেন্দ্র পর্যন্ত ২ কিলোমিটার বিকল্প ভূগর্ভস্থ সোরস লাইন নির্মাণ হয়েছে। এটি চালু হলে বিউবো’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিলেট-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আক্তারুজ্জামান লস্কর জানান, রমজানকে সামনে রেখে পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকেও সব প্রস্তÍুতি নেয়া হয়েছে। ৬৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিশ্চিত আছে। তিনি জানান, ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে যখন বিদ্যুৎ চমকায়, তখন সঞ্চালন লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আর ঝড়-বৃষ্টিতে লাইনের উপর গাছ-পালাসহ অনেক কিছু পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই পুনরায় সংযোগ দিতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।