অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ হলেই চালু হবে পাথারিয়া সেতু
দুর্ভোগ কমবে ২৫ গ্রামের মানুষের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ৪:৩১:২৪ অপরাহ্ন
মো. নুরুল হক, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে : শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া বাজার সংলগ্ন সুরমা নদীতে ১৭৫ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মিত হওয়ায় দুর্ভোগ কমেছে সেখানকার ৪টি ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষের। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি ৭০ লক্ষ ৯২ হাজার ৮শ’ টাকা। অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ কাজ শেষ হলেই সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেতুটি নির্মিত হয়েছে। এতে উপকৃত হবেন ওই এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নকে দ্বিখ-িত করেছে পুরাতন সুরমা নদী। এ নদী দিরাই উপজেলায় প্রবেশ করে নাম ধারণ করেছে কালনী। নদীর পূর্বপাড়ে পাথারিয়া ইউনিয়নের একাংশ, পশ্চিম বীরগাঁও, জয়কলস ও পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের ২৫টিরও বেশি গ্রাম। পাথারিয়া বাজারে অর্থাৎ নদীর পশ্চিম পাড়ে আসতে পূর্ব পাড়ের চার ইউনিয়নের ২৫টিরও বেশি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পেতে হতো। নদী পারাপার হওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল খেয়া নৌকা। খেয়া নৌকায় নদী পার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীকে। শিক্ষার্থীদের দেরি করে পৌঁছাতে হয়েছে বিদ্যালয়ে। অনেক সময় নৌকা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় যেতেও দেরি হতো। রোগী নিয়ে আসা ব্যক্তিদের ভোগান্তির সীমা থাকতো না। মাছ আর ধান ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা পোহাতে হতো। খরচও পড়তো বেশি। এসব কারণেই সুরমা পাড়ের মানুষের কাছে একটি সেতু নির্মাণ ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তাঁর প্রচেষ্টায় এলাকাবাসীর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। পাথারিয়া বাজার সংলগ্ন, সুরমা হাইস্কুল এন্ড কলেজের পশ্চিমাংশ ঘেঁষে, পুরাতন সুরমা নদীর উপর সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুর দুইপাশের অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ ইউপি রাস্তায় চেইনেজসহ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ২৫০ মিটার।
জানা গেছে, সেতুটির পূর্বপাড়ে পাথারিয়া ইউনিয়নের কান্দিগাঁও, পুরাতন কান্দিগাঁও, আসামমুড়া, কাশিপুর, নারাইনকুড়ি, শ্রীনাথপুর, জাহানপুর, নতুন জাহানপুর, পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের জয়সিদ্ধি, বসিয়াখাউরি, বড়মোহা, দূর্বাকান্দা, শান্তিপুর, উলারপিঠা, শ্যামনগর, ঠাকুরভোগসহ সমস্ত ইউনিয়ন, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের হাঁসকুড়ি, ধলমৈশা, কাউয়াজুরী, উমেদনগর ও উপ্তিরপাড় এবং জয়কলস ইউনিয়নের পশ্চিম দক্ষিণাংশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচল এ সড়কে। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলেও তৈরি করতে হবে সড়ক। শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে যে সড়ক ডুংরিয়া বাজার হয়ে রজনীগঞ্জ (টানাখালী) বাজারের দিকে গিয়েছে সে সড়কের সাথে সংযোগ সড়ক হলে উপজেলা সদরের সাথে পাথারিয়া ইউনিয়নের দূরত্ব কমে আসবে ১০ কিলোমিটারের উপরে। বর্তমানে দিরাই সড়ক হয়ে শান্তিগঞ্জ যেতে ঘুরতে হয় ২০ কিলোমিটার। সেতুটি চালু হলে পাথারিয়া বাজার থেকে মাত্র ৭/৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যাওয়া যাবে শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরে। কেবল শান্তিগঞ্জই নয়, দিরাই উপজেলার লোকজনও সড়কটি ব্যবহার করতে পারবেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাথারিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে চলা পুরাতন সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতুটির মূল অংশের নির্মাণকাজ শেষ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড। সেতুর পূর্ব এবং পশ্চিম পাড়ে মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে সংযোগ সড়ক। চলছে এ্যাপ্রোচের কাজ। সেতুটির উপরে রাখা আছে বেশ কিছু নির্মাণ সামগ্রী। উভয়পাড়ের মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন সেতু। হেঁটে যাচ্ছেন কিছু শিক্ষার্থী।
নদীর পূর্বপাড়ের বাসিন্দা আসামমুড়া গ্রামের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী রেশমি আক্তার ও কান্দিগাঁও গ্রামের মানবিক বিভাগের ছাত্রী মুসলিমা বেগম বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিলো এ সেতু। আগে ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই চিন্তা থাকতো খেয়া নৌকা পাবো কি না। কোনো কারণে নৌকা মিস হলেই পরীক্ষায় যেতে দেরি হতো। কিছুদিন পর পর নৌকা ডুবতো। বই খাতা ভিজে সব নষ্ট হতো। দুর্বিষহ দিনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে।
দলিল লেখক অজিত দে, সংগঠক মনোয়ার হোসেন হিমেল, নারাইনকুড়ি গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী ফয়জুল হক ও পোল্ট্রি মোরগের ব্যবসায়ী জামাল পাশা জানান, এ সেতু চালুর পর উপজেলা সদরের সাথে আমাদের এলাকার দূরত্ব ১০/১২ কিলোমিটার কমবে। সহজেই ও কম সময়ে উপজেলা সদরে গিয়ে কাজ করা যাবে। নদীর অপর পাড় থেকে মাছ নিয়ে এপাড় আসতে দুই তিনটা গাড়ি বদলাতে হতো। এখন আর সে কষ্ট করতে হবে না। সরাসরি মাছ আনা নেওয়া করা যাবে। দুর্ভোগ কমবে পূর্বপাড়ের মানুষের।
পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, পুরাতন সুরমার উপরে সেতু ছিলো পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। পরিকল্পনামন্ত্রীর হাত ধরে এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। আমার ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুব আলম বলেন, সেতুটির মূল অংশের কাজ শেষ। এখন বাকী দু’পাশের অ্যাপ্রোচের কাজ। প্রোটেকটিভ ব্লক বসানো হচ্ছে। সামান্য কাজ বাকী। চলতি বছরের জুনের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান তিনি।