জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ৬:০৯:৪৮ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সরকার ও দেশের উন্নয়নে স্থিতিশীলতা দেয়া সত্তে¡ও কতিপয় সংসদ সদস্য অনুচ্ছেদটির বিরোধিতা করায় তিনি তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অনুচ্ছেদ ৭০ গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় ও জনগণের কাছে গণতন্ত্রের সুফল পৌঁছে দেয়ার জন্য এটিকে আরও শক্তিশালী করে। কিন্তু, আমাদের (সংসদ) সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন এই অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে। কারণ, এই অনুচ্ছেদের জন্য তারা ইচ্ছেমতো সরকার ভাঙা-গড়ার খেলা খেলতে পারছেন না।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদের ২২তম (বিশেষ) অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানত সংসদ সদস্যদের ফ্লোর ক্রসিংয়ের কারণে ১৯৪৬ এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারগুলোকে উৎখাত করার কথা উল্লেখ করে, তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে কয়েকজন সংসদ সদস্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। যারা এটা করছেন তাদের অভিজ্ঞতার অভাব থাকতে পারে। ৭০ অনুচ্ছেদ আমাদের দেশে সরকারকে স্থিতিশীলতার সুযোগ দিয়েছে- যে কারণে দেশ উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে।’ বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের তার বক্তৃতায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের কথা বলেন।
এর আগে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় প্রধানমন্ত্রীর ৭ এপ্রিল গৃহীত একটি রেজ্যুলেশনের ভিত্তিতে সংসদে বিশেষ আলোচনা হয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে দেশের অর্জন তুলে ধরে স্মারক ভাষণ দেন। সংসদে আরও বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমল প্রত্যক্ষ করায় তাদের অভিজ্ঞতা খুবই ভিন্ন। আমেরিকায় তাঁর প্রথম সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে আন্ডার সেক্রেটারির সাথে সাক্ষাৎকালে আমি বলেছিলাম, “আমি এখানে আসার আগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ দেখেছি, যেখানে লেখা আছে- জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের সরকার। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি- যেখানে জেনারেলের জন্য, সেনাদের দ্বারা, সেনাদের সরকার।”
তিনি বলেন, ‘আমি সেই বৈঠকে বলেছিলাম, আমেরিকা আটলান্টিকের তীর পর্যন্ত তার গণতন্ত্রের চর্চা করে। আটলান্টক পাড়ি দিলেই কি আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা পাল্টে যায়?’
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের এই প্রশ্নটিও করেছি, কেন আপনারা সামরিক স্বৈরশাসনকে সমর্থন করছেন?।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটি (যুক্তরাষ্ট্র) প্রায়ই গণতন্ত্রের কথা বলে এবং বিরোধী দলসহ কিছু লোক সেইসব সবক শুনে উৎফুল্ল বোধ করে।
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা যে কোনো দেশের সরকারকে উৎখাত করতে পারে। বিশেষ করে, মুসলিম দেশগুলো কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর, পুরো বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়েছে এবং এটাই বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি নামকরা পত্রিকা ৭ বছরের এক শিশুর হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তাকে মিথ্যা বলতে বলে। তারা তার মন্তব্য লিপিবদ্ধ করে – ‘আমরা ভাত-মাছ-মাংসের স্বাধীনতা চাই’ এবং তা প্রকাশ করে’।
তিনি সংসদে বলেন, ‘সেখানেও আছে সেই নামকরা সংবাদপত্র, যা খুবই জনপ্রিয়। এর নাম প্রথম আলো (আলো), কিন্তু এটা অন্ধকারে বাস করে। প্রথম আলো আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও দেশের জনগণের শত্রæ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাই যে- তারা কখনই এই দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন তারা খুবই আনন্দিত হয়েছিল এবং সেই সময়ের ওই প্রক্রিয়ায় এ দুটি সংবাদপত্র সর্বাত্মকভাবে জড়িত ছিল। তাদের সাথে, একজন আছেন ‘সুদখোর’ (ঋণদাতা), যিনি আমেরিকার খুব প্রিয়।
তিনি বলেন, আমেরিকা একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করে না যে একটি ব্যাংক (গ্রামীণ ব্যাংক), যেটি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যিনি সরকারি বেতন পেতেন- তিনি কোটি কোটি ডলার কোথায় পেলেন। তিনি কীভাবে আমেরিকার মতো জায়গায় বসে সামাজিক ব্যবসা করতে পারেন? দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ করেন? এই টাকা কোথা থেকে আসে? তারা কি কখনো তাকে এটা জিজ্ঞেস করেছে? জিজ্ঞাসা করেনি।
তিনি বলেন, “আর এখন, আমাদের তাদের কাছ থেকেই দুর্নীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই সম্পর্কে পাঠ নিতে হবে। মানবাধিকার সম্পর্কেও তাদের কাছ থেকে আমাদের কথা শুনতে হবে।”
তিনি বলেন, এই লোকেরা (ড. ইউনুস ও অন্যান্য) দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করার চেষ্টা করছে এবং জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ বিশ্বাস করে যে আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য কমে গেছে আমরা প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা দিচ্ছি।’