সুরমা নদী খনন
নকশা থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চর বাদ পড়ায় বিশ্বনাথের জনমনে ক্ষোভ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২৩, ৫:১৮:৪২ অপরাহ্ন
বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে এমদাদুর রহমান মিলাদ ঃ সুরমা নদী খনন প্রকল্পের নকশা থেকে বিশ্বনাথের দুটি গুরুত্বপুর্ণ চর বাদ দেয়ায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খনন কাজের নকশায় বাদ দেয়া হয়েছে সুরমার লামাকাজী সেতুর দক্ষিণ থেকে পরগনা বাজারের পশ্চিম পর্যন্ত তিলকপুর ও হেরাখলা মৌজার প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ (খননকৃত ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে)।
এলাকাবাসী জানান, ওই দুই কিলোমিটারের মধ্যে দুটি বড় চর রয়েছে। বালুখেকো কিছু ‘অসৎ’ ব্যক্তি ওই দুটি চর প্রতিবছর লিজ নিয়ে বা রাতের আঁধারে লুকিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করেন। ফলে নদীর পশ্চিম পাড় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ লামাকাজী-বিশ^নাথ সড়ক, লামাকাজী রাগীব-রাবেয়া স্কুল এন্ড কলেজ, মুন একাডেমী ও মসজিদসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।
স্থানীয় লোকজনের আশংকা, ওই দুই কিলোমিটার চর খনন করা না হলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলে ও তীব্র ¯্রােতে নদী ভাঙন আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
সুরমা নদীর লামাকাজী এলাকার ওই দুটি গুরুত্বপূর্ণ চর খনন কাজের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে লামাকাজী এলাকাবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি ও রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে তিনি (আমিনুল ইসলাম) বলেন, ‘অদৃশ্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ দুটি চর বাদ দিয়ে নদী খনন কাজের নকশা তৈরী করা হয়েছে। প্রতি বছর ওই দুটি চর থেকে বালুখেকোরা বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করে। ভাঙ্গণের তীব্রতা থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে ওই দুটি চর খনন সময়ের দাবি। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন সদুত্তর দিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ দৈনিক সিলেটের ডাক-কে জানান, ‘নদীর খনন কাজের প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে সমীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)-কে। তারা সমীক্ষা করে নদীর যে সকল স্থানে খনন করার জন্য নকশা তৈরী করেছেন-আমরা তা খনন করছি। এতে আমাদের কিছু করার নেই।’
আইডব্লিউএম-এর বন্যা ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক তরুণ কান্তি মজুমদার দৈনিক সিলেটের ডাক-কে জানান, ‘সুরমা নদীর পুরো ১৮ কিলোমিটার খনন করা হবে না। আমরা সমীক্ষা করে নদীর যে স্থানে পানির ধারণ ক্ষমতা কম-সেই স্থান খননের জন্য নকশা তৈরী করেছি। ওই স্থানে (লামাকাজী সেতুর দক্ষিণ থেকে পরগনা বাজারের পশ্চিম পর্যন্ত) যদি নদীর পূর্ব পার্শ্বে চর রয়েছে, কিন্ত পশ্চিম পার্শ্বে ধারণ ক্ষমতা থাকায় ওই অংশটুকু নকশা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন কিছুই করার নেই।’
ভুক্তভোগীরা জানান, পাহাড়ী ঢলে ভরাট হওয়ার কারণে শীত মৌসুমে সুরমা নদী শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়। বর্ষায় নদীর তীর উপচে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় সিলেট মহানগরীসহ নদীর তীরবর্তী এলাকা। গত বছর দুই দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সিলেটবাসীকে। তাই নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করে পাউবো চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি খনন কাজের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আগামী জুন মাসের মধ্যেই খনন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।