ত্যাগের মহিমায় সমোজ্জ্বল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৩, ৬:৫৮:২২ অপরাহ্ন
অসৎ লোক কাউকে সৎ মনে করে না, সকলকেই সে নিজের মতো ভাবে। -হজরত আলী রা.
মুসলিম উম্মাহর মহামিলনের উৎসব ঈদ। ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির মহান শিক্ষা দেয় ঈদ। আত্মত্যাগের মহান বার্তা নিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা। এই দিনে সামর্থ্যবানরা সাধ্যমতো পশু কুরবানি দেবেন। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা পশু কুরবানি দেবেন না ঠিকই, তবে তারাও ঈদ করবেন। ঈদের আনন্দে শরীক হবেন ধনি-নির্ধন সকলেই। প্রতিটি মানুষের মনের কালিমা, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে তাকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে গড়ে তোলার শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে ‘নফস’। এই নফস মানুষকে ভালো কাজে বাধা দেয় আর খারাপ কাজের প্রতি প্রলুব্ধ করে। ঈদুল আজহার ত্যাগের শিক্ষা এই নফসকে ধংস করে দেয়।
আল্লাহ প্রেমের একটি বিস্ময়কর নিদর্শন হচ্ছে ঈদুল আজহা। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তার অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন হয় এই ঈদুল আজহায়। কুরবানির ইতিহাস খুবই প্রাচীন। বলা হয় সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই সূচনা হয় কুরবানির ধারাবাহিকতা। কুরবানি ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিধান। এই বিধান সুচারুরূপে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থা অনুযায়ী পালন করার ওপরই এর মাহাত্ম্য নিহিত। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের নিয়তে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নির্দিষ্ট ধরণের পশু কুরবানি (জবেহ) করাকে কুরবানি বলা হয়। হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.) দ্বারা সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হাজার হাজার বছর ধরে উদযাপিত হয়ে আসছে কুরবানির ঈদ বা ঈদুল আজহা। আরবী ‘কুরুবুন’ শব্দের অর্থ নৈকট্য লাভ করা, নিকটবর্তী হওয়া। কুরুবুন থেকেই এসেছে কুরবানি। আনন্দ এবং দুঃখ এই দুইয়ের মিশ্র অনুভূতি নিয়েই আসে ঈদুল আজহা প্রতি বছর। হজরত ইব্রাহীম (আ.) এবং হজরত ইসমাইল (আ.) এর মহান ত্যাগ ও ঈমানি শক্তির দৃঢ়তাকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের কাছে চিরঞ্জীব করে রাখার জন্যই পবিত্র ঈদুল আজহাকে আমাদের জন্য উৎসব ও পাশাপাশি ত্যাগের দিন হিসেবেও নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই কুরবানির দিনে মানব সন্তানের জন্য কোন কাজই আল্লাহর কাছে এতো প্রিয় হয় না, যতোটুকু হয় প্রিয় রক্ত প্রবাহিত করায়। কুরবানির মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। কিন্তু কুরবানির সেই শাশ্বত শিক্ষায় আমরা কতোটুকু অনুপ্রাণিত হচ্ছি? একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অন্তরের তাক্বওয়া বা পরহেজগারিকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ইসলাম। আর তাই কুরবানির সঙ্গে পরহেজগারি ও আল্লাহর নৈকট্যলাভ একই সূত্রে গাঁথা।
ঈদ আসে প্রতি বছর। শুধু ঈদ নয়, আরও অনেক ধর্মীয় তাৎপর্যময় দিবস আসে আমাদের দোয়ারে। কিন্তু এসব বিশেষ দিনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে অবস্থান করছি। দেখা যায় ঈদুল আজহার শিক্ষা থেকে দূরে থাকার রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয় এই সমাজে। এটা মূলত আভিজাত্য আর চাকচিক্য প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা চলছে দামি পশু কেনার। এই প্রতিযোগিতা কুরবানির মহান শিক্ষাকে পদদলিত করছে। সামর্থ্যবানেরা কুরবানি দেবেন, আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা পশু কুরবানি দেবেন না এটা ঠিক; তবে তাদেরকে অবশ্যই কুরবানি দিতে হয় একটি জিনিসকে। আর সেটা কোন পশু নয়, মনের পশুত্বকে। আর এই কুরবানিটুকু দিতে হয় ধনি-নির্ধন সকলকেই। মনের পশুকে কুরবানি না দিয়ে শুধু পশু কুরবানি দিলে সেটা হবে স্রেফ লোক দেখানো একটা বিষয়। আমরা যেন এই লোক দেখানো কুরবানি দেয়ার ধারা থেকে দূরে থাকি, সেই শক্তি যেন আমরা পাই; আজকের এই দিনে আমরা তা-ই কামনা করছি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়–ক ধনি নির্ধন সকলের ঘরে। ঈদ মুবারক।