প্রসঙ্গ : নিরাপদ খাদ্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:১৭:০৪ অপরাহ্ন
অযোগ্য লোককে দায়িত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া চরম দায়িত্বহীনতা। -শেখ সাদি
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের নানা উদ্যোগ অব্যাহত থাকলেও বাস্তবে তার সুফল নেই বললেই চলে। তেমনি একটি উদ্যোগ হচ্ছে, খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বিষয়ে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। প্রায় আড়াই বছর আগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পত্রিকার মাধ্যমে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে মূলত খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে অসত্য বা মিথ্যা তথ্য প্রদানের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয় সংশ্লিষ্টদের। বলা হয়, মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচার নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ অনুযায়ি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর শাস্তি এক বছর কারাদ- বা চার লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-। এই সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর দেশের বাজারে যতোসব খাদ্যপণ্যের বিকিকিনি হচ্ছে, তার কতোগুলো ‘নিরাপদ’ হয়েছে,সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।
বাজারে যতোসব খাদ্যদ্রব্য রয়েছে তার মধ্যে কতোগুলো নিরাপদ কিংবা ভেজালমুক্ত,বলা মুশকিল।
অথচ এগুলোর ব্যাপারে উৎপাদনকারিরা রকমারি মুখোরোচক শব্দমালা দিয়ে গুনাবলি প্রচার করছে। সবচেয়ে আশ্বর্য্যের বিষয় হচ্ছে, এসব পণ্যের ব্যাপারে বিশিষ্ট চিকিৎসক কিংবা বিশেষজ্ঞগণের প্রশংসাসূচক বক্তব্যও প্রচার হচ্ছে। অথচ যেসব পণ্যের পক্ষে তারা সাফাই গাইছেন, পরীক্ষায় এগুলোতে আদতে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদানই পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক সময় বিশেষজ্ঞগণ কোন নির্দিষ্ট পণ্যের উৎপাদনকারীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে একই ধরণের পণ্য উৎপাদনকারী অপর একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে থাকেন। প্রকৃত অর্থে কোন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যই মানসম্পন্ন নয়। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লিখিত বিশেষজ্ঞদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণের গুণ, প্রকৃতি, মান ইত্যাদি সম্পর্কে অসত্য বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ বা সমতূল্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সুপারিশকৃত এই ধরণের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে উল্লিখিত শর্তাবলী সংবলিত নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করা হয় ২০১৩ সালে। সেই হিসেবে বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পর্কিত যে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে, সেটা নতুন কিছু নয়। অর্থাৎ এই খাদ্য আইনের নির্দেশাবলী থাকা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে; যেখানে এই আইনকে সামান্যই পরওয়া করা হয়নি।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রচলিত খাদ্য আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। এতোদিন এই আইনকে অবহেলা করা হয়েছে বলেই কখনও এ ব্যাপারে সরকার নড়ে চড়ে বসবে না, সেটা আমরা মনে করি না। আর উল্লিখিত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর দেশের ভোক্তা সাধারণও মনে করছেন আর হয়তো খাদ্যপণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপনে তাদের বিভ্রান্ত হতে হবে না। মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।