ফের হকারদের দখলে নগরীর ফুটপাত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২৩, ৪:৫৩:০৩ অপরাহ্ন
ব্যবসায়ী-পথচারীদের ক্ষোভ
আনাস হাবিব কলিন্স
সিলেট নগরীর ফুটপাত ফের হকারদের দখলে চলে গেছে। ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের হেঁটে চলাও যেন দায় হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি একই অবস্থা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। যে কোন সময় এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
ভুক্তভোগীরা জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের কারণে হকার উচ্ছেদ কার্যক্রমে কিছুটা ঢিলেমি ভাব পরিলক্ষিত হয়। গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিসিক নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এরই মধ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের নভেম্বরের প্রথমার্ধ্বে। নগরীতে কার্যত দুজন মেয়র দায়িত্ব পালন করলেও হকার উচ্ছেদে কেউই উদ্যোগী হচ্ছেন না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এই সুযোগে হকাররা রাস্তায়-ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে অনেকটা নির্বিঘেœ তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নগরীর ব্যস্ততম আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার ঘুরে হকারদের রাস্তা জুড়ে দিব্যি ব্যবসা করতে দেখা গেছে।
সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে তাদের ব্যবসা।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সিমিতি সিলেট জেলা শাখার সদস্য সচিব আব্দুর রহমান রিপন জানান, হকারদের রাস্তা দখলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তারা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। কিন্তু, এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যেকোন সময় বিস্ফোরণ¥ুখ হয়ে উঠতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় রয়েছেন বলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়। তবে, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান সাময়িক স্থবির হলেও আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম জানান, নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হকার উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশ সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। এসএমপি’র পক্ষ থেকে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনে অভিযান আরো বেগবান করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
এদিকে, নগরীতে হকারদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন, মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক এক যুক্ত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, ‘নগরীর রাস্তার দুই পাশ এখন হকারদের দখলে। হকাররা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। যার ফলে একদিকে যেমন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে; অন্যদিকে পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাতে বসা নিয়ে হকারদের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ফুটপাতে চলতে গিয়ে নারীরাও ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। হকাররা দলবেধে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে চলেছে বলে তাদের অভিযোগ। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিসিকের কোন তৎপরতা না থাকায় ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলারও অবনতি ঘটছে। যার ফলে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মার্কেটের সামনে ফুটপাত দখল করে রাখায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অবৈধ ফুটপাত দখলমুক্ত করতে তৎপর ছিলেন। কিন্তু, সদ্য সমাপ্ত সিসিক নির্বাচনের পর সেই তৎপরতা চোখে পড়ছে না। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত মেয়রের মেয়াদ থাকলেও তিনি এখন এ ব্যাপারে অনেকটা লাগাম ছেড়ে দিয়েছেন। যে কারণে ব্যবসায়ীরা অনেকটাই হতাশ।
বিবৃতিতে এও বলা হয়, বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রিক্সার প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও এখন অবাধে এ রাস্তায় প্রবেশ করছে রিক্সা। সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ এসব সমস্যা সমাধানে সিসিক ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।