বায়ুদূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুলাই ২০২৩, ৬:০২:০৩ অপরাহ্ন
রাহমানা শাব্বীর চৌধুরী
আমাদের দেশে নানাভাবে পরিবেশদূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বায়ুদূষণ। এতে প্রাণ-প্রকৃতি ও জনস্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব পড়ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো- পরিবেশদূষণে কম ওজনের শিশু জন্মাচ্ছে, মানুষ ভুগছে স্ট্রোক, হার্টঅ্যাটাক ও ডায়াবেটিসে। অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় কয়েকটি শহরের পরিবেশদূষণের জন্য মূলত দায়ী সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডস, ওজোন, কার্বন-মনোক্সাইড ও পার্টিকুলেট ম্যাটার। এ গ্যাসীয় পদার্থগুলো তৈরি হচ্ছে যানবাহন, কলকারখানা, ইটের ভাটা থেকে।
বিশ্বব্যাংক এক গবেষণায় বলছে, বাংলাদেশে অকালমৃত্যুর ২০ শতাংশ হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। ওই প্রতিবেদনে তারা জানাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একে অন্যের বায়ুদূষণের কারণ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের চারটি দেশের ওপর দিয়ে মেঘমালা ভেসে যাচ্ছে। ওই মেঘের মধ্যে দূষিত বায়ু আশ্রয় নিচ্ছে। এক দেশের বায়ুদূষণ ছড়িয়ে পড়ছে ভিন্ন দেশে। বায়ুবাহিত রোগের কারণ হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ অঞ্চলটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু নিঃসরণকারী অঞ্চল। বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি শহরের ৯টিই এ অঞ্চলে। বায়ুদূষণ মোকাবেলায় এ অঞ্চলের দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগ ও সমন্বয় কল্পনাও করা যায় না। স্থানীয় কর্তৃপক্ষও দূষণ নিয়ন্ত্রণে তেমন সক্রিয় নয়। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে এখানকার শহরগুলোর বায়ু ছয় থেকে ২৫ গুণ পর্যন্ত খারাপ। দক্ষিণ এশিয়ায় মোট ছয়টি অভিন্ন মেঘমালা রয়েছে।
এগুলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ দূষণ কম থাকলেও এ মেঘমালার কারণে সবাই সমহারে দূষণের শিকার হচ্ছে। ঢাকা, কাঠমা-ু ও কলম্বো শহর এমন দূষণের শিকার হচ্ছে বলে জানানো হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দূষণের অভ্যন্তরীণ উৎস বন্ধেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ জন্য দরকার দেশগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা। এ ধরনের সমঝোতা প্রতিষ্ঠা হওয়া এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য অনেক কঠিন। যেখানে দেশগুলো অনেক সাধারণ বিষয়েও একে অপরের স্বার্থরক্ষায় আন্তরিক নয়। তবে ঢাকার বায়ু উচ্চমাত্রায় দূষিত। কল-কারখানার বিপুল ধোঁয়া প্রতিনিয়ত এখানকার বাতাসে মিশছে। তার চেয়ে বড় কারণ-শহরের নির্মাণকাজ। এই শহরে বিগত ৩০ বছর ধরে উচ্চহারে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময় এতে নতুন মাত্রা পায় বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ। উড়াল সড়ক, মেট্রোরেলসহ শত শত প্রকল্প থেকে প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণ ঘটছে। এই অনিয়ন্ত্রিত দূষণ নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে সামান্যই। এই শহরের চারপাশে চলছে বিপুল উন্নয়নকর্মকা-। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বৃহত্তর ঢাকা একটি উদীয়মান শিল্প এলাকা। এখানকার অব্যাহত উন্নয়ন কর্মকা- থেকে নির্গত ধূলি ও ধোঁয়া ভয়াবহ দূষণ ছড়াচ্ছে বৃহত্তর ঢাকায়। কিছু শিল্প এলাকায় ধোঁয়ার কু-লী দেখা যায়। ঘন কালো ধোঁয়ার কারণে দিনের বেলায়ও চারপাশে মনে হয় রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। এ ধরনের শিল্প এলাকায় আবার রয়েছে অগুনতি ইটের ভাটা। বাসাবাড়ি নির্মাণও চলছে হরদম। এ জন্য পুরো অঞ্চলে শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের রোগীর আধিক্য দেখা যায়। এই চিত্র একই সাথে আমাদের পুরো দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, পুরো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে মানুষ। দূষণ না করেও এর শিকার হয়ে রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি হওয়ার দুটো কারণ রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ ও কলকারখানার উপজাত অবাধে বাতাসে মিশ্রণ এবং দূষণজনিত আইন প্রয়োগের অভাব। দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী কোন বিধিনিষেধ দেখা যায় না। ফলে মানুষ এ ব্যাপারে একেবারে বেখবর। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য জনস্বার্থে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার অন্তত ইটভাটা, রাসায়নিকের কারখানাগুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করতে পারে। এরা যদি শর্ত মেনে চলে তাহলে পরিস্থিতির বড় দাগে উন্নতি ঘটতে পারে। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। যাতে কোনো এলাকায় বায়ুদূষণ হলে সঙ্ঘবদ্ধভাবে মানুষ এর প্রতিকারে এগিয়ে আসতে পারে।
লেখক : কবি।