অটিজম ও অটিস্টিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ২:১৪:০৭ অপরাহ্ন
দুলাল শর্মা চৌধুরী
শিশুদের অনেকগুলো সমস্যা অথবা রোগের মধ্যে একটি হচ্ছে অটিজম। যদিও বর্তমানে এই সমস্যা এবং রোগটি নিয়ে অনেকেই অনেক আলোচনা করেছেন। এবং বেশির ভাগ মা, বাবাই এই অটিজম সম্পর্কে জানতো না কিংবা ধারণা ছিল না, অটিজম কাকে বলে কিংবা অটিজম ব্যাপারটা আসলে কি।
বর্তমানে অটিজম বেশ আলোচনা হওয়ার ফলে অনেকেই এখন অটিজম সম্পর্কে জানতে পারছে। তবে জানার বা বোঝার পরিমাণটা যে বেশি তা কিন্তু নয়। অনেক বাবা, মা-ই আছেন যারা অটিজম কাকে বলে জানা তো দূরের কথা অটিজম শব্দটাই তারা শোনেননি। এখন আসা যাক অটিজম কাকে বলে একটু জেনে নেই।
‘অটিজম’ শব্দটি এসেছে মূলত ‘আউটোস’ শব্দ থেকে। আউটোস শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ। যার অর্থ আত্ম বা নিজ। অটিজম হচ্ছে শিশুদের ¯œায়ুবিক একটি সমস্যা। যাকে বলা হয়, ডিসঅর্ডার অব নিউরাল ডেভেলপমেন্ট’।
অটিজম হচ্ছে শিশুদের একটি মানসিক সমস্যা বা রোগ। এটি শিশুদের ¯œায়ুবিক সমস্যা জনিত রোগ। এই রোগের ফলে এই ধরনের শিশুরা অন্যান্য সুস্থ শিশুদের তুলনায় ভিন্ন হয়ে থাকে।
অর্থাৎ, যে সমস্যা মূলত একটি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে বাঁধাগ্রন্ত করে অপূর্ণতায় রাখে তাকেই অটিজম বলে।
অটিজম রোগটি সাধারণত ১২ থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। এবং এই রোগটি বেশির ভাগই দেখা দেয় ছেলেদের মধ্যে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যেই এই রোগটি বেশি দেখা যায়। ধারণা করা হয়, অটিজম সাধারণত ব্রেণের অস্বাভাবিক বায়োলজি ও কেমিস্টির কারণে সৃষ্টি একটি সমস্যা কিংবা রোগ। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে, অটিজম জিনগত কারণেও হয়ে থাকে বলে বলা হয়। তবে এটি ঠিক কি কারণে হয় বা হচ্ছে সেটি এখন অব্দি স্পষ্ট করে জানা যায়নি। অনেকে বা ধারণা করেন, শিশু গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মায়ের দুশ্চিন্তা, অপুষ্টিতে ভোগা, টিকার প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারণে অটিজম হয়।
আবার অটিজমের প্রকারভেদ অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ সময় যে দুটি অটিজম সমস্যা বা রোগগুলো দেখা যায় তা হলো- ক্লাসিক আটিস্টিক ডিজঅর্ডার এবং অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম। ক্লাসিক অটিস্টিক ডিজঅর্ডার সাধারণত ৩ বছর হওয়ার আগেই এটি দেখা দেয়। এটি মূলত শিশুর বিকাশে বাধা দেয় কিংবা বলা যায়, শিশুর বিকাশে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যেমন- শিশু দেরিতে কথা বলে, বুঝতে সমস্যা ইত্যাদি। ক্লাসিক অটিস্টিক ডিজঅর্ডারকে আবার আর্লি ইনক্যান্টাইল অটিজমও বলা হয়ে থাকে।
অ্যাসপার্জাস সিনড্রোম আক্রান্ত শিশু কথা বলতে পারলেও এরা কারো সাথে মিশতে পছন্দ করে না কিংবা মিশতে পারে না।
এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা যে কোনো একটি কাজে খুব বেশি পারদর্শী হয়ে থাকে। কিন্তু অন্য কোন কাজে বা বিষয়ে আবার একেবারেই অপারগ এবং কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
সুইস বিজ্ঞানী অরগেন ব্লয়লার ১৯১১ সালে সর্বপ্রথম অটিজমকে এক প্রকার মানসিক রোগ বলে চিহ্নিত করেন। এরপর থেকেই মূলত অটিজম নিয়ে আরো বেশি গবেষণা করা শুরু হয়। অটিজম সম্পর্কে মানুষকে আরো বেশি জ্ঞাত করার লক্ষ্যে এবং অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মূল্যায়নের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশেও এদিন নানা আয়োজনে অটিজম নিয়ে আলোচনা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতার লক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। এ ব্যাপারে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিজম বিষয়ে মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। এবং তার সুযোগ্য কন্যা শেখ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে অটিজম ব্যাপারে পরিবার পরিজন সদস্যরা অটিজম রোগকে জানতে পারছেন। এবং তাদের শিশুর প্রতি অধিক যতœশীল এবং তাদের আচার আচরণ গভীর ভালোবাসার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছেন।
সর্বশেষ শিশুদের নিয়ে বলা যায়, শিশুরা বরাবরই খুব সেন্সেটিভ হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত এদের দরকার হয় যতেœর। শিশুরা সঠিক যতেœর মধ্যেই বড় হয়ে উঠে। শিশুর যতœ নেয়াটা প্রভাব ফেলে শিশুর বেড়ে উঠা, মানসিক বিকাশ, বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে উঠা প্রতিটি পদক্ষেপেই। শিশুর প্রতি যতœ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সবচেয়ে বেশি মা এবং বাবা। তাই অটিজম শিশুদের পাশাপাশি সুস্থ শিশুদের প্রতিও সমানভাবে যতœশীল হওয়া সবার দরকার। অটিজম শিশুরা যেমন অন্য শিশুদের সাথে মিশতে পারে না বা চলাফেরা করতে পার না তবুও তাদের জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য প্রয়োজন সমাজ, পাড়া, প্রতিবেশি পরিবার থেকে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, মানবিকভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের হাসি খুশি রাখা এবং তাদের প্রতি যতœ এবং ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় থেরাপি দেওয়া। তবেই ধীরে ধীরে এরা স্বাভাবিক হয়ে উঠার পরিমাণটা বাড়বে বলে আশা করা হয়।
লেখক: কবি