নির্বিচারে পাহাড় কাটা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫১:১৩ অপরাহ্ন
হ্যাঁ এবং না কথা দুটো সবচেয়ে পুরনো এবং সবচেয়ে ছোট। কিন্তু এ কথা দুটো বলতেই সবচেয়ে বেশি ভাবতে হয়। -পীথাগোরাস
সিলেটের জৈন্তাপুরে পাহাড়-টিলায় গর্ত খুঁড়ে পাথর তোলার মহোৎসব চলছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে চলছে পাথর উত্তোলন। আইন শৃংখলা বাহিনী অভিযান চালিয়েও পাথরখেকো চক্রকে থামাতে পারছে না। খবরটি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সম্প্রতি। একই দিন একটি সহযোগি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সিলেট নগরীর মিরাপাড়ায় টিলা কাটার সময় পুলিশ অভিযান চালায়। টের পেয়ে টিলা কাটার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
পাহাড়-টিলা প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলো কেউ তৈরি করতে পারবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পাহাড়-টিলা। বিশেষজ্ঞগণ পাগাড়-টিলাকে ‘ভূমির খুঁটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। ধংস করা হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিশেষ করে, সিলেট অঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য্যম-িত পাহাড়-টিলা অনেকগুলো ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে। আবার অনেকগুলো ধংসের দ্বারপ্রান্তে। সিলেট বিভাগের সর্বত্র চোখে পড়ে সবুজে ঢাকা পাহাড়-টিলা হয়ে গেছে লাল। কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। তাই বেরিয়ে পড়েছে লাল মাটি। এর ফলে বাড়ছে টিলাধস। জরিপের তথ্য হচ্ছে, সিলেটের শতকরা ১১ ভাগ ভূমি পাহাড়। এর মধ্যে প্রায় ১৮ ভাগ উঁচু ভূমি। এখানে রয়েছে ৬৬ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল। এর মধ্যে শতকরা ২৩ ভাগ পাহাড় ও টিলার ওপর অবস্থিত। সিলেট অঞ্চলে ১৯৯৭ সালে ছিলো ৩৮ হাজার ২৭৭ হেক্টর পাহাড়ি অঞ্চল। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বনাঞ্চল উজাড় করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত দেড় দশকে সিলেটের ৬১টি টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। জেলার ৪১২টি পাহাড়-টিলার মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৩৫১টি। সরকারি হিসাবে ধংস হওয়া টিলার সংখ্যা ৬১টি।
আর বেসরকারি সংস্থাগুলোর দাবি শতাধিক টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে গত দেড় দশকে। পরিবেশ বিষয়ক আরেকটি সংগঠনের দাবি, গত তিন দশকে সিলেট নগরীর ৫০ ভাগ টিলা ধ্বংস করা হয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ি পাহাড়-টিলা কাটা নিষেধ। আইনে বলা হয়, ‘কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় বা দখলে বা ব্যক্তিমালিকানায় পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে কোন পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যেতে পারে।’
কে থামাবে পাহাড়খেকোদের এই ধংসযজ্ঞ, কেউ জানে না। ইতোপূর্বে উচ্চ আদালত সিলেট সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ছয় উপজেলায় পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা দেন। অন্য এক আদেশে পাথর কোয়ারিতে সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও সিলেটের পাথর কোয়ারিতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু কোন নির্দেশনাই কার্যকর নেই। দেখা যায় নির্দেশনা কার্যকর করার দায়িত্ব যাদের, তারা প্রায় সকলেই কোন না কোনভাবে ‘ম্যানেজ’ হয়ে যায়। এই ‘ম্যানেজ’ হওয়ার প্রবণতা বন্ধ না হলে কোন অপরাধই ঠেকানো যাবে না।